স্পন্সরড এলার্ম


এবিসি রেডিওর স্টুডিওতে প্রথম আলো জবস ‘হতে চাই পেতে চাই’ অনুষ্ঠানে ১৩ ডিসেম্বর এসেছিলেন ফ্রিল্যান্স ফটোগ্রাফার ও পাঠশালা সাউথ এশিয়ান মিডিয়া একাডেমির প্রভাষক (লেকচারার) আশরাফুল আউয়াল মিশুক। কথা বলেছেন কথাবন্ধু মারিয়ার সঙ্গে। আলোকচিত্র অর্থাৎ ফটোগ্রাফির নানা বিষয় এবং এ পেশার বিভিন্ন দিক নিয়ে আলোচনা করেছেন।
কথাবন্ধু: ভালো ফটোগ্রাফার বা আলোকচিত্রশিল্পী হতে হলে কোন কোন বিষয়ে বিশেষ গুণাবলির প্রয়োজন হয়?
আশরাফুল আউয়াল মিশুক: ক্যামেরা কীভাবে ব্যবহার করবেন সে বিষয়ে ধারণা থাকতে হবে। ভালোভাবে ক্যামেরা চালানোর দক্ষতা অর্জন করতে হবে। তবে অবশ্যই ছবি তোলার চোখ থাকতে হবে। যাকে বলে ফটোগ্রাফি আই। এবং ক্রিয়েটিভ আই অর্থাৎ সৃজনশীল চোখও থাকতে হবে। ছবির মাধ্যমে আপনার সৃজনশীলতা প্রকাশ পাবে। যেকোনো পরিস্থিতি মোকাবিলা করার জন্য উপস্থিত বুদ্ধি থাকাটাও জরুরি। একজন ফটোগ্রাফারকে অর্থাৎ একজন আলোকচিত্রশিল্পীকে খুব দায়িত্ব নিয়ে কাজ করতে হয়। কেননা, আপনার একটি ভুল ছবি ভবিষ্যতের জন্য বিপজ্জনক হতে পারে। সে ক্ষেত্রে আলোকচিত্রশিল্পীকে অবশ্যই দায়িত্ববান হতে হবে।
কথাবন্ধু: ভালো আলোকচিত্রশিল্পী হতে হলে প্রাতিষ্ঠানিক ডিগ্রি কি খুবই জরুরি?
আশরাফুল আউয়াল মিশুক: ফটোগ্রাফি ভালো করার জন্য বা ভালো ফটোগ্রাফার হওয়ার জন্য প্রাতিষ্ঠানিক ডিগ্রি বাধ্যতামূলক নয়। তবে বর্তমান সময়ে ফটোগ্রাফারের সংখ্যা অনেক বেড়ে গেছে। সে ক্ষেত্রে আপনার যদি একটি প্রাতিষ্ঠানিক ডিগ্রি থাকে তাহলে আপনি নিজেকে আর ১০ জন থেকে আলাদা করতে পারবেন। এ ছাড়া ফটোগ্রাফিকে আপনি যদি পেশা হিসেবে নিতে চান তখন ওই ডিগ্রিটি আপনার পেশাগত জীবনে আলাদা যোগ্যতা হিসেবে যুক্ত হবে। সে ক্ষেত্রে অবশ্যই প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা জরুরি।
কথাবন্ধু: বাংলাদেশে ফটোগ্রাফি বিষয়ে প্রাতিষ্ঠানিক জ্ঞানার্জনের ক্ষেত্রে কী কী সুযোগ রয়েছে?
আশরাফুল আউয়াল মিশুক: ফটোগ্রাফি বিষয়ে প্রাতিষ্ঠানিক ডিগ্রির জন্য প্রথমেই যে প্রতিষ্ঠানটির নাম আসে সেটি হচ্ছে পাঠশালা। আমি নিজেও পাঠশালা থেকে তিন বছরের প্রফেশনাল কোর্স করেছি। এই প্রফেশনাল কোর্সটিকে একটি গ্রাজুয়েশন কোর্সের মতোই সাজানো হয়েছে। এ ছাড়া আরও কিছু ইনস্টিটিউট আছে, যারা ফটোগ্রাফির ওপরে শর্ট কোর্স বা ডিপ্লোমা করিয়ে থাকে। এর মধ্যে রয়েছে বেগার্ট ইনস্টিটিউট ও আঁলিয়াস ফ্রঁসেস।
শ্রোতাবন্ধু শরীফ (খুদেবার্তা থেকে): আমি একজন ভালো ফটোগ্রাফার হতে চাই। এ জন্য কী করতে হবে?
আশরাফুল আউয়াল মিশুক: আপনাকে সাহস করে ক্যামেরা নিয়ে বের হতে হবে। কারণ ঘরে বসে ফটোগ্রাফার হওয়া যায় না। তাই দ্রুত একটি ভালো ক্যামেরা কিনুন এবং মাঠে নেমে পড়ুন।
কথাবন্ধু: ফটোগ্রাফি পেশায় আপনি মূলত কী ধরনের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করছেন?
কথাবন্ধু: ফটোগ্রাফি পেশায় আপনি মূলত কী কী চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করছেন?
আশরাফুল আউয়াল মিশুক: আপনাকে সঠিক সময়ে, সঠিক পরিস্থিতিতে, সঠিক স্থানে থাকতে হবে। সব ফটোগ্রাফারকেই এ চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে হয়। এ ছাড়া ফটোগ্রাফির অনেক কিছু লাইট বা আলোর ওপর নির্ভরশীল। সে ক্ষেত্রে আলো এবং পরিবেশ যদি আপনার সহযোগী না হয় সে জন্য আপনাকে ওই পরিস্থিতিতে সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে হবে। কারণ আপনার কাজটি দেখেই গ্রাহকের চাহিদা বাড়বে এবং আপনার কাছে আরও নতুন নতুন কাজ আসবে।
কথাবন্ধু: বাংলাদেশে ফটোগ্রাফিতে কাজের পরিধি অনেক কম। এ বিষয়ে আপনার অভিমত কী?
আশরাফুল আউয়াল মিশুক: ফটোগ্রাফিতে কাজের পরিধি অনেক। এ জন্য চাহিদা তৈরি করতে হবে। চাহিদা তৈরি করতে পারলে ফটোগ্রাফিতে অনেক সুযোগ রয়েছে। আমাদের দেশে দুই ধরনের ফটোগ্রাফার আছে। একটি হচ্ছে প্রাতিষ্ঠানিক ফটোগ্রাফার, আরেকটি হচ্ছে অপ্রাতিষ্ঠানিক ফটোগ্রাফার। এর মধ্যে স্থায়ীভাবে যারা চাকরি করেন তাঁরাই প্রাতিষ্ঠানিক ফটোগ্রাফার, অর্থাৎ যাঁরা কোনো প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ হয়ে কাজ করেন। প্রাতিষ্ঠানিক কাজের ক্ষেত্রগুলোর মধ্যে রয়েছে সংবাদপত্র, ম্যাগাজিন ইত্যাদি। আর অপ্রাতিষ্ঠানিক ফটোগ্রাফি বলতে বোঝায়, যাঁরা কোনো প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে স্থায়ীভাবে চুক্তিবদ্ধ নন, তাঁদের বলা হয় ফ্রিল্যান্স ফটোগ্রাফার। সে ক্ষেত্রে ফ্রিল্যান্স ফটোগ্রাফাররা ওয়েডিং ফটোগ্রাফি (বিয়ের ছবি) করতে পারেন। বিভিন্ন এনজিও ও এজেন্সিগুলোর সঙ্গে ফটোগ্রাফাররা কাজ করতে পারেন। এ ছাড়া বাণিজ্যিক ক্ষেত্রে বিজ্ঞাপন বা বিলবোর্ডেরও কাজ হতে পারেন। ফ্যাশন ফটোগ্রাফি একটি বড় মাধ্যম। এ ছাড়া ইন্ডাস্ট্রিয়াল ফটোগ্রাফি, আর্কিটেকচারাল ফটোগ্রাফিও বা ফুড ফটোগ্রাফিও রয়েছে। আমাদের দেশে ফটোগ্রাফারদের কাজের অনেক সুযোগ রয়েছে।
কথাবন্ধু: সাধারণ ফটোগ্রাফি ও ফটোসাংবাদিকতার মধ্যে পার্থক্য কী?
আশরাফুল আউয়াল মিশুক: ফটোগ্রাফি মানেই অসাধারণ। যাঁরা শৌখিন ফটোগ্রাফার তাঁরাও অনেক কিছু ভেবে ছবি তোলেন। দুই ধরনের ফটোসাংবাদিকতা রয়েছে। কোনো পত্রিকায় বা কোনো প্রতিষ্ঠানের নিয়মানুযায়ী স্থায়ীভাবে কাজ করা এবং আরেকটি হচ্ছে ফ্রিল্যান্স সাংবাদিকতা করা। ফ্রিল্যান্স সাংবাদিকেরা নিজের মতো করে কাজ করার সুযোগ পান। সেখানে কাজের চাহিদা অনেক বেশি থাকে। নিজের মতো করে যেকোনো বিষয়কে প্রাধান্য দিয়ে ফ্রিল্যান্স সাংবাদিকতা করা সম্ভব।
কথাবন্ধু: একজন ফটোগ্রাফারের পেশাদারী লক্ষ্য কী হওয়া উচিত?
আশরাফুল আউয়াল মিশুক: বর্তমানে আলোকচিত্রশিল্পীর সংখ্যা অনেক বেশি। পেশাদারী ফটোগ্রাফার ছাড়াও অনেকে ভালোবেসে বা ভালোলাগা থেকে ছবি তোলেন। সে ক্ষেত্রে পেশাদার আলোকচিত্রশিল্পীদের উচিত শৌখিন আলোকচিত্রশিল্পীদের সঙ্গে একটি পার্থক্য তৈরি করা। কারণ অন্যদের চেয়ে আপনাকে অবশ্যই আলাদা হওয়া উচিত। আপনার দক্ষতা প্রমাণ করা উচিত। এ জন্য সব পেশাদার আলোকচিত্রশিল্পীকে একটি লক্ষ্য নিয়ে এগিয়ে যেতে হবে।
কথাবন্ধু: ফটোগ্রাফি কি শুধুই স্মৃতিকে ধারণ করা না অন্যকিছু, আপনার অভিমত কী?
আশরাফুল আউয়াল মিশুক: ফটোগ্রাফি স্মৃতিকে ধারণ করে রাখে এটি যেমন সত্যি তেমনি এটি বর্তমানের কথাও বলে, যাকে আমরা বলি ভিডিও ল্যাংগুয়েজ অর্থাৎ ছবির ভাষা। ফটোগ্রাফি একটি শক্তিশালী মাধ্যম। ছবিতে আপনি আপনার ইচ্ছে, ভাব, অনুভূতি ইত্যাদি প্রকাশ করতে পারেন। (2849)