স্পন্সরড এলার্ম


দশম জাতীয় সংসদের তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব গ্রহণ করেছেন নাটোর-৩ আসনের সংসদ সদস্য জুনাইদ আহমেদ পলক। ডিজিটাল বাংলাদেশ বিনির্মাণের লক্ষ্যে তিনি ইতোমধ্যেই নানান পরিকল্পনা হাতে নিয়েছেন। সাবেক আইসিটি মন্ত্রীর অসমাপ্ত কাজ এবং আগামীদিনের সম্ভাব্য কর্মপরিকল্পনা সম্পর্কে জানতে বিশেষ সাক্ষাৎকার নিয়েছেন প্রতিবেদক
এম. মিজানুর রহমান সোহেল
প্রশ্ন : আপনার মন্ত্রণালয় অগ্রাধিকার ভিত্তিতে কোন পদক্ষেপ সবার আগে বাস্তবায়ন করতে যাচ্ছে?
পলক : আমার মন্ত্রণালয়ের প্রথম কাজ হবে ফ্রিল্যান্সারদের উদ্যোক্তা হিসেবে তৈরি করা। এ জন্য আমরা ‘ফ্রিল্যান্সার টু এন্টারপ্রেনর’ নামের একটা বিশেষ প্রজেক্ট হাতে নিয়েছি। যেখানে রুপালী ব্যাংক, বেসিক ব্যাংক, বাংলাদেশ ব্যাংকসহ অন্যান্য বেসরকারি প্রতিষ্ঠানকে আমরা সম্পৃক্ত করেছি। এ ক্ষেত্রে ব্যাংকগুলো ফ্রিল্যান্সারদের প্রাথমিক অবস্থাতে যেন কম সুদে এবং সহজ শর্তে ২ থেকে ৩ লাখ টাকা দেয় সে ব্যবস্থা করছি। একই সঙ্গে আমরা মোবাইল অ্যাপস ডেভেলপমেন্ট প্রোগ্রামকেও গুরুত্ব দিচ্ছি। আশা করছি এই প্রকল্পের মাধ্যমে এক বছরের মধ্যে ২ হাজার ডেভেলপার তৈরি করতে পারব। এক্ষেত্রে আমাদের সহযোগিতা করবে এমসিসি, বেসিস, সিম্ফনি, গুগল, মাইক্রোসফটসহ অনেক সফটওয়্যার কোম্পানি। এ প্রকল্প বাস্তবায়ন করতে পারলে দেশের সফটওয়্যার শিল্প বিকশিত হবে।
প্রশ্ন : আপনি দায়িত্ব নেয়ার পরপরই হাইটেক পার্ক পরিদর্শন করেছেন। এ প্রকল্প কি আদৌ বাস্তবায়ন হবে?
পলক : দেখুন, হাইটেক পার্ক আমাদের অগ্রাধিকার প্রকল্প। ১৯৯৯ সালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা হাইটেক পার্ক করার চিন্তা করেছিলেন এবং ২০০০ সালে কাজ শুরু করেছিলেন। আমরা ১৪ বছর ধরে ধারাবাহিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছি। এখন হাইটেক পার্ক প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে মূল বাধা আইনগত জটিলতা। আগামী ২৩ জানুয়ারি এ মামলার শুনানি হবে। আমি মন্ত্রিসভার বৈঠকের প্রথম দিনেই আইনমন্ত্রী এবং অ্যাটর্নি জেনারেলের সঙ্গে এ ব্যাপারে কথা বলেছি। আশা করছি দ্রুত আইনগত দিকগুলো নিষ্পত্তি হলেই হাইটেক পার্ক করতে কোনো বাধা থাকবে না। এ ছাড়া সফটওয়্যার পার্ক বা জনতা টাওয়ারও আইনগত বাধার কারণে আটকে রয়েছে। এটাও দ্রুত নি®পত্তি হবে বলে আমি আশা করছি।
প্রশ্ন : দেশে কিছু ডিজিটাল ব্যর্থতা রয়েছে। তার মধ্যে প্রধানত পেপ্যাল না আসা অন্যতম। সে ব্যাপারে কি উদ্যোগ নিচ্ছেন?
পলক : আসলে পেপ্যাল মনে করছে বাংলাদেশ তাদের জন্য বড় মার্কেট না। ফলে তারা এ দেশে এখনই কার্যক্রম শুরু করতে আগ্রহী নয়। আমরা আমাদের মার্কেটটাকে সে পর্যায়ে নিয়ে যেতে চেষ্টা করব, যাতে তারা আমাদের সম্পর্কে আগ্রহী হয়ে ওঠে। তার আগ পর্যন্ত আপনি নিশ্চয়ই জানেন, বাংলাদেশ থেকে এখন কেউ পেপ্যালে অ্যাকাউন্ট করতে চাইলে ২৫ ডলার খরচ করে একটি অ্যাকাউন্ট করতে পারে। যারা প্রাথমিক পর্যায়ের ফ্রিল্যান্সিং করছেন তাদের জন্য হয়তো এই টাকা খরচ করা বেশি হয়ে যায়। আমরা এই খরচ ২৫ ডলার থেকে কমিয়ে নিয়ে আসতে চেষ্টা করছি। আর বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নরের সঙ্গে আমরা একটা বৈঠক করব যেন ব্যাংকের মাধ্যমে এই মানি ট্রানজেকশনটা সহজ করা যায়।
প্রশ্ন : আপনি বলছেন বাংলাদেশ বড় মার্কেট না হওয়ার কারণে পেপ্যাল আসছে না। অথচ বাংলাদেশে শুধু ফ্রিল্যান্সাররাই প্রতিদিন ১ কোটি টাকার ওপরে আয় করছে। তবুও বলবেন বড় মার্কেট নয়?
পলক : গ্লোবালী বাংলাদেশের যে অবস্থানটি তৈরি হয়েছে তা দেখে বলা যায় এ দেশের মানুষের আগ্রহ রয়েছে। এখন তাদের ম্যানেজমেন্ট স্কিলটা বৃদ্ধি করা, তাদের অর্থনৈতিক সাপোর্ট দেয়া এবং তাদের এন্টারপ্রেনর হওয়ার ক্ষেত্রে যেসব পূর্বশর্ত এবং নির্দেশনা প্রয়োজন তা তৈরি করে দিতে চাচ্ছে আইসিটি মন্ত্রণালয়। এগুলো যদি আমরা যথাযথভাবে বাস্তবায়ন করতে পারি তাহলে একটি সফল পরিণতির দিকে নিয়ে যেতে পারব।
প্রশ্ন : বাংলাদেশে বিশ্বমানের হ্যাকার রয়েছেন। তাদের সম্পর্কে আপনার মূল্যায়ন কি?
পলক : হ্যাকার মানেই কিন্তু অপরাধ জগতের কোনো বাসিন্দা বা মাফিয়া গোষ্ঠী নয়। আমরা চিন্তা করছি হ্যাকারদের তাদের যোগ্যতা ও মেধার ভিত্তিতে দেশের তথ্য-প্রযুক্তির উন্নয়ন ও সাইবার নিরাপত্তার জন্য কাজে লাগাব। আর আমাদের মোবাইল অ্যাপস ডেভেলপমেন্ট প্রোগ্রাম শেষে ২০১৪ সালেই সারা দেশে জাতীয়ভাবে যাদের তথ্য-প্রযুক্তি সম্পর্কে আগ্রহ ও যোগ্যতা রয়েছে তাদের জন্য ৪৮ ঘণ্টাব্যাপী হ্যাকাথন করব। দেশের সাইবার সম্পর্কিত কাজে এখান থেকেই একটি প্লাটফর্ম তৈরি করব এবং যোগ্যতার ভিত্তিতে তাদের কাজের সুযোগ করে দেয়া হবে।
প্রশ্ন : ব্যক্তি স্বাধীনতা হরণ করার ক্ষেত্রে অনেকেই আইসিটি অ্যাক্টকে কালো আইন হিসেবে অভিহিত করছেন। আপনি কীভাবে দেখছেন?
পলক : আপনি যদি আইসিটি অ্যাক্ট পুরোটা পড়ে দেখেন তাহলে দেখবেন এই অ্যাক্টে কোথায়ও বা কোনো জায়গায় এমন কিছু নেই যাতে মুক্ত চিন্তা বা সুস্থ প্রকাশনা বাধাগ্রস্ত হয়। অথবা অবাধ তথ্য প্রকাশে কোনো প্রতিবন্ধকতা তৈরি হয় এমন কোন ধারা-বিধি এই আইনে নেই। যেটুকু আছে, অবাধ তথ্য-প্রযুক্তির ব্যবহার করে কেউ যেন কোনো অপপ্রচার করতে না পারে, ধর্মীয় উস্কানি দিতে না পারে, বিশৃঙ্খল সৃষ্টি করতে না পারে, অন্য কারও মুক্তচিন্তার অধিকার ক্ষুণ্ন করতে না পারে অথবা অন্য কারও ব্যক্তিগত ব্যাপার বিকৃতভাবে উপস্থাপন করে তার সম্মানহানি করতে না পারে। রামু বা বেড়ার মতো ঘটনা যেন পুনরায় সৃষ্টি হতে না পারে সে জন্যই এই আইন প্রণয়ন করা হয়েছে। ফলে এটাকে কালো আইন বলার সুযোগ নেই।
প্রশ্ন : আইসিটি ও টেলিকম মন্ত্রণালয়কে অভিন্ন করার জন্য অনেকেই প্রস্তাব দিয়েছেন। এ ব্যাপারে আপনার মতামত কি?
পলক : তথ্য ও প্রযুক্তির ব্যবহার, প্রসার, পুরো দেশকে ডিজিটালাইজড করা এবং তথ্য ও প্রযুক্তিনির্ভর অর্থনীতি গড়ে তোলার ক্ষেত্রে টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয় এবং তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি মন্ত্রণালয় একত্রিতভাবে কাজ করলে সুন্দর ও সহজ হয়। আপনি জানেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবারই প্রথম দুই মন্ত্রণালয় এক হওয়ার জন্য একটি সুযোগ তৈরি করে দিয়েছেন। এবার একজন পূর্ণমন্ত্রী টেলিযোগাযোগ এবং তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে আছেন। ফলে আমাদের মধ্যে যে পারস্পরিক সম্পর্ক বা সমঝোতার প্রয়োজন সেটার প্রথম সেতুবন্ধন হয়ে গেছে। আমারা আশা করছি, আগামীদিনে আরও ভালোভাবে এটার বাস্তবায়ন হবে।
প্রশ্ন : আগামী পাঁচ বছরে আইসিটি সেক্টরে কি কি বড় ধরনের পরিবর্তন হতে যাচ্ছে? কি কি করবেন বলে ভাবছেন?
পলক : ২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বর নির্বাচনের আগেই বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০২১ সাল নাগাদ আধুনিক প্রযুক্তিনির্ভর বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে একটি দীর্ঘ মেয়াদি ভিশন দিয়েছিলেন। সেই ভিশন নিয়ে আমরা গত পাঁচ বছর কাজ করেছি এবং সেটার ধারাবাহিকতা এখনও করছি। যেহেতু ২০১১ সালে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির স্বতন্ত্র মন্ত্রণালয় গঠিত হয়েছে ফলে এখানে আমাদের দায়িত্ব-কর্তব্য আরও বেড়ে গেছে। এখন আমরা সব বিভাগ থেকে তাদের পরামর্শ চাচ্ছি এবং একই সঙ্গে আমরা শর্টটার্ম, মিডটার্ম ও লংটার্ম আমাদের মন্ত্রণালয়ের জন্য পরিকল্পনা করার চেষ্টা করছি। এ জন্য একের পর এক আমাদের সিরিজ বৈঠক চালাচ্ছি এবং অল্প সময়ের মধ্যেই আমাদের মন্ত্রণালয়ের জন্য একটি রূপরেখা তৈরি করব। এই রূপরেখায় অগ্রাধিকার ভিত্তিতে হাইটেক পার্ক ও সফটওয়্যার পার্ক প্রতিষ্ঠা, ই-লার্নিং ব্যবস্থাকে তৃণমূল পর্যায়ে পৌঁছে দেয়া, প্রত্যেকটা স্কুলে আধুনিক কম্পিউটার ল্যাব ও স্মার্ট ক্লাসরুম তৈরি করা, সারা দেশে তৃণমূল পর্যায়ে লক্ষাধিক হটস্পটের মাধ্যমে গ্রামীণ জনগোষ্ঠী ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোকে ফ্রি ইন্টারনেট ব্যবহারের সুযোগ তৈরি করে দেয়া।
প্রশ্ন : তরুণ ও সর্বকনিষ্ঠ মন্ত্রী হিসেবে তরুণদের জন্য কোনো মেসেজ থাকলে বলুন।
পলক : ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার যে দৃঢ় প্রত্যয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ঘোষণা করেছেন, সেটি বাস্তবায়ন করার স¤পূর্ণ দায়িত্ব তরুণ প্রজন্মদের। বাংলাদেশের ৭০ শতাংশের বেশি জনগোষ্ঠী তরুণ প্রজন্ম, যাদের বয়স ৩৫-এর নিচে এবং বাংলাদেশের ৪ ভাগের এক ভাগ জনগোষ্ঠী যাদের বয়স ১২ থেকে ১৪ বছরের নিচে। তো আমাদের এই ভবিষ্যৎ প্রজন্মই কিন্তু আমাদের ডিজিটাল বাংলাদেশ বিনির্মাণের সব থেকে বড় যোদ্ধা। তাই এই যোদ্ধাদের জন্য আমার একটাই ম্যাসেজ- বি ডিজিটাল, বিল্ড ডিজিটাল। (1519)