স্পন্সরড এলার্ম


মানব সভ্যতার একটি উল্লেখযোগ্য আবিষ্কার হল উড়োজাহাজ। উড়োজাহাজ আবিষ্কারের পর থেকে মানুষ খুব দ্রুত এক স্থান থেকে অন্য স্থানে গমন করতে পারছে। ফলে পৃথিবীর এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তের দূরত্ব কমে গেছে অনেকখানি। বেঁচে যাচ্ছে মূল্যবান কর্ম ঘণ্টা। তবে মাঝে মাঝে হাজার হাজার ফুট উপরে ওড়া এসব বিমানের চালকরা হয়ে পড়েন অসহায়। প্রাকৃতিক দুর্যোগ বা যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে ঘটে যেতে পারে বিরাট কোন দুর্ঘটনা। হতে পারে হাজার মানুষের প্রাণহানি। পরিসংখ্যান মতে গড়ে প্রতি বছর প্রায় ১২০০ জন মানুষ বিমান দুর্ঘটনায় নিহত হয়।
বিমান দুর্ঘটনার সঠিক কারণ অনুসন্ধানের জন্য ব্ল্যাক বক্স নামে একটি যন্ত্র বিমানে বহুল ব্যবহৃত হয়। সাধারণত মনে প্রশ্ন জাগতে পারে ব্ল্যাক বক্স আসলে কি? ব্ল্যাক বক্স হল এক ধরণের ডিভাইস যা বিমানের বিভিন্ন তথ্য ধারণ করে রাখে। ফলে বিমান দুর্ঘটনার কারণ অনুসন্ধান করতে অনুসন্ধানী দলের সুবিধা হয়। এই ব্ল্যাক বক্সে একটি রেকর্ডার সিস্টেম চালু থাকে। যার ফলে উড্ডয়নের সময়ের বিভিন্ন তথ্য রেকর্ড হয়ে থাকে।
সাধারণত ব্ল্যাক বক্স এমন ভাবে তৈরি করা হয় যেন তা উচ্চ তাপমাত্রায় ক্ষতিগ্রস্ত না হয়। দুর্ঘটনায় বিমানটি পুড়ে ছাই হয়ে গেলেও ব্ল্যাক বক্স থাকে অক্ষত। ব্ল্যাক বক্সে তথ্য ধারণ করার জন্য এক প্রকার ম্যাগনেটিক টেপ ব্যবহার করা হয়। এই ম্যাগনেটিক টেপ অনেকটা পুরনো দিনের ক্যাসেটের ফিতার মত। এর ফিতার দৈর্ঘ্য প্রায় ৬০০০ ফুট। ব্ল্যাক বক্সের ভেতরে এই ফিতা প্যাঁচানো থাকে। ব্ল্যাক বক্সের বাহিরের আবরণ উচ্চ তাপ সহনশীল স্টিল দিয়ে তৈরি। তাই দুর্ঘটনার ফলে উৎপন্ন হাজার ডিগ্রী তাপমাত্রা এটির কোন ক্ষতি করতে পারেনা। ফলে তথ্য সুরক্ষিত থাকে। এক একটি ব্ল্যাক বক্স তৈরিতে খরচ হয় ১০ থেকে ১৫ হাজার ডলার। সাধারণত একটি ব্ল্যাক বক্সের দুটি অংশ থাকে। একটি হচ্ছে Flight data recorder বা FDR। FDR বিমানের পেছনে রাখা থাকে। এটা বিমানের মধ্যেকার ও সংলগ্ন পরিবেশের বিভিন্ন রকমের শব্দ, চাপ বা তাপের পরিবর্তনের হিসাব এবং আরও অনেক রকমের উড়ান সংশ্লিষ্ট তথ্য রেকর্ড করে | এটা একটানা ২৫ ঘণ্টা উড্ডয়নের তথ্য রেকর্ড রাখতে পারে। অপরটি হল Cockpit voice recorder বা CVR। এটা রাখা হয় বিমানের পাইলটদের ঘরে। এটি ককপিটের মধ্যে যে কোন ধরণের শব্দ রেকর্ড করে রাখে। যেমন বিমানের পাইলটদের মধ্যে কথাবার্তা, ককপিটে যে কোন ধরণের বিস্ফোরণের শব্দ।
ব্ল্যাক বক্সের রঙ আসলে কাল নয়। এটা দেখতে কমলা রঙের। দুর্ঘটনার ফলে সৃষ্ট ধ্বংস স্তূপের মধ্যে থেকে যেন খুব সহজেরই ব্ল্যাক বক্স খুঁজে পাওয়া যায় তাই এটির রঙ কমালা করা হয়েছে। কমলা রঙের হয়েও এটার নাম কিভাবে ব্ল্যাক বক্স হয়েছে সেটা এখন অজানা। তবে ধারণা করা হয় যে দুর্ঘটনার পর আগুনে পুড়ে এটা কাল রং ধারণ করে বলে এটির নাম ব্ল্যাক বক্স রাখা হয়েছে। আবার কেউ কেউ মনে করেন বিমান দুর্ঘটনা মানে অনেক মানুষের মৃত্যু। তাই এই অশুভ ঘটনা বা শোক প্রকাশের জন্য একে ব্ল্যাক বক্স নামকরণ করা হয়েছে।
বিমান দুর্ঘটনার পর অনুসন্ধানী দল প্রথমে এই ব্ল্যাক বক্স খুঁজে বের করে। পরে এটা পাঠানো হয় বিশেষজ্ঞের কাছে। তারা ব্ল্যাক বক্সের তথ্য বিশ্লেষণ করে বিমান দুর্ঘটনার সঠিক কারণ অনুসন্ধান করেন। যদি বিমানের কোন যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে বিমান দুর্ঘটনা ঘটে তাহলে সেই ত্রুটি পরবর্তিতে সংশোধন করা হয়। ২০০০ সালের ২৫ জুলাই এয়ার ফ্রান্স ফ্লাইট ৪৫৯০ “চার্লেস ডি গুলি আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে নিউইয়র্ক এ জন এফ কেনেডি আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের উদ্দেশ্যে যাত্রার সময় যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে বিমানটি দুর্ঘটনায় পতিত হয়। এই বিমান দুর্ঘটনার জন্য মোট ১১৩ জন প্রাণ হারায়। ব্ল্যাক বক্সের তথ্য বিশ্লেষণ করে জানা যায় এই বিমানের যান্ত্রিক ত্রুটির কথা। আর এই বিমান দুর্ঘটনার মাধ্যমে ২০০০ সালে সমাপ্তি ঘটে কনকর্ড যুগের।
(1575)