স্পন্সরড এলার্ম


আমরা সহজ কথায় বলতে পারি বিদ্যুৎ হল বৈদ্যুতিক চার্জ বা শক্তির স্থানান্তর। কখনও শক্তির দ্বিতীয় উৎস বা শক্তির প্রবাহ বলে অভিহিত করা হয়।আমাদের দৈনিন্দন জীবনে টেলিভিশন থেকে গাড়ি প্রত্যেকটি জিনিস বিদ্যুৎ দ্বারা চালিত হয়, আর এর জন্য বিদ্যুতের একটি উৎসের প্রয়োজন। যখন বিদ্যুতের কথা আসে, তখন আমরা অসংখ্য উৎসের কথা বলতে পারি যা বিদ্যুৎ তৈরি করতে পারে। অতি-পরিচিত ও বিপুল পরিমাণে উৎপাদনের জন্য, আমরা উল্লেখ করতে পারি- পানি-বিদ্যুৎ, পারমানবিক শক্তি, সৌর শক্তি এবং বায়ু শক্তি। প্রযুক্তির অগ্রযাত্রা আমাদেরকে এসব শক্তি ব্যবহার করে আশ্চর্য ও মুগ্ধকর জীবনোপকরণ যেমন- রোবটের আপ্যায়ন ও স্মার্ট ফোনের সুবিধা পাওয়ার সুযোগ করে দিয়েছ।
এসব শক্তির উৎস থেকে আমরা আসলে কি পাচ্ছি। ইলেকট্রন স্থানান্তরের শক্তি। আমাদের পুঁথিগত বিদ্যার দিকে পিছন ফিরে তাকালে দেখতে পাই- বিভিন্ন ধরনের পরমাণুতে রয়েছে বিভিন্ন সংখ্যক প্রোটন, ইলেকট্রন ও নিউট্রন। প্রোটন পজিটিভ, ইলেকট্রন নেগেটিভ চার্জ বিশিষ্ট ও নিউট্রন চার্জ-হীন।
প্রত্যেকটির প্রাথমিক অংশ যেমন-অক্সিজেন যা শ্বাস-প্রশ্বাসের সাথে গ্রহণ করি, সোডিয়াম ও পটাশিয়াম যা খাবার হিসেবে গ্রহণ করি, এর প্রত্যেকেরই আলাদা সংখ্যক প্রোটন ও ইলেকট্রন আছে যা দ্বারা সহজেই অন্যদের থেকে আলাদা করা সম্ভব। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই ইলেকট্রন ও প্রোটনের সংখ্যা সমান হয়, যা পজিটিভ ও নেগেটিভ চার্জের সমতা নিশ্চিত করে। প্রোটন পরমাণুর নিউক্লিয়াস অর্থাৎ কেন্দ্রে থাকে আর ইলেকট্রন নিউক্লিয়াসের চার দিকে ঘুরতে থাকে।
ইলেকট্রনের জন্য মজার কাণ্ড হল- তাদের একেক স্তরে (শেল) অবস্থানের জন্য একেক ধরনের শক্তি নির্ধারিত থাকে। ইলেকট্রনকে প্রোটনের চারদিকে ঘুরার জন্য এই স্তরগুলো একটি জায়গা সুনির্দিষ্ট করে দেয়। অনেকটা ঠিক সৌরজগতের মত যেমন সূর্য্যকে কেন্দ্র করে নির্দিষ্ট দূরত্বে অন্যান্য গ্রহগুলো নির্ধারিত অর্বিটে প্রদক্ষিণ করে। নেগেটিভ চার্জ-ধারী ইলেকট্রন পজিটিভ চার্জ-ধারী প্রোটন দ্বারা আকর্ষণ করে। যে সব ইলেকট্রন নিউক্লিয়াস থেকে অনেক দূরে থাকে সেগুলো নিউক্লিয়াসের কাছের ইলেকট্রনের চেয়ে অধিক হালকা ভাবে আকর্ষণ করে যা সহজেই মুক্ত ইলেকট্রন হিসেব অন্য পরমাণু দ্বারা আকৃষ্ট হয়ে চলে যেতে পারে।
পরমাণুর বাহিরের শেলকে ব্যালেন্স শেল এবং এই শেলের ইলেকট্রনকে ব্যালেন্স ইলেকট্রন বলে যা হালকা ভাবে আবদ্ধ থাকে ও সহজেই মুক্ত হয়ে চলে যেতে পারে। যদি কোন শক্তি দ্বারা কোন ইলেকট্রন মুক্ত হয়ে কোন নির্দিষ্ট দিকে চলতে থাকে, তাহলে পাশের পরমাণুর ব্যালেন্স শেল থেকে ইলেকট্রন ঐ পরমাণুর দিকে চলতে থাকবে। কারণ পরমাণুর প্রোটন ও ইলেকট্রন সবসময় একটি নির্দিষ্ট অনুপাতে থাকতে চায়। এই মুক্ত ইলেকট্রনের প্রবাহের শক্তিই হল বিদ্যুৎ শক্তি।
বিদ্যুৎ যখন মানুষের শরীরে তৈরি হয়, তখন ইহা রাসায়নিক শক্তি থেকে তৈরি হয়। আমরা যেসব জিনিস আমাদের শরীরে গ্রহণ করি যেমন-অক্সিজেন, সোডিয়াম, পটাশিয়াম, ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম ইত্যাদি এর প্রত্যেকেরই নির্দিষ্ট বৈদ্যুতিক চার্জ আছে- অর্থাৎ তাদের নির্দিষ্ট সংখ্যক ইলেকট্রন ও প্রোটন আছে। একেক ধরনের রাসায়নিক পদার্থের পরমাণু একেক ধরনের।
আমরা যখন খাবার খাই তখন হজম প্রক্রিয়ার সাহায্যে খাবারের বৃহৎ অংশ ভেঙ্গে ক্ষুদ্র থেকে ক্ষুদ্রতম অংশে পরিণত হয়। শরীরের কোষ খাদ্যের এই ক্ষুদ্রতম অংশ থেকে শক্তি সংগ্রহ করে, আর শক্তি সংগ্রহের এই প্রক্রিয়াকে সেলুলার রেসপিরেশন বলে। অর্থাৎ প্রত্যেক খাদ্য-কণা বা পরমাণুর মধ্যে বৈদ্যুতিক ইম্পালস তৈরির জন্য সঞ্চিত শক্তি রয়েছে যা শরীরের ভিতরের নির্দিষ্ট সময়ে উহার অবস্থানের উপর নির্ভর করে। উদাহরণ স্বরূপ, আমাদের হার্ট কিভাবে বিদ্যুৎ তৈরি করে দেখা যেতে পারে। হার্টে বিভিন্ন গ্রুপের কোষ থাকে, যেমন- উপরের ডান দিকের অংশের নাম “Sinoatrial নড” বা SA নড। SA নডের (পেস-মেকার) কোষগুলোর ভিতর ও বাহিরে ইলেক্ট্রোলাইট থাকে। আমরা জানি শরীরের অভ্যন্তরে সাধারণত ইলেকট্রোলাইটগুলো হল সোডিয়াম, পটাশিয়াম, ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম, ফসফরাস ও ক্লোরাইড। সোডিয়াম ও ক্যালসিয়াম সাধারণত থাকে নডের কোষের বাহিরে থাকে এবং ভিতরে থাকে পটাশিয়াম। এই বিশেষ ধরনের কোষ অধিক পরিমাণে সোডিয়ামকে ভিতরে প্রবেশ ও পটাশিয়ামকে বাহির হতে দেয়। ফলে সবসময় পজিটিভ চার্জ তৈরি করে এবং একটা নির্দিষ্ট মানে পৌঁছে যখন ক্যালসিয়ামকেও ভিতরে প্রবেশ করতে দেয়।ফলে কোষের ভিতরে কার্যকরি শক্তি হিসেবে চূড়ান্ত পজিটিভ চার্জ ধারণ করে এবং এমন অবস্থানে পৌঁছে যে হার্টের নার্ভ সিস্টেম দিয়ে ডিসচার্জ হওয়ার মত যথেষ্ট শক্তি সঞ্চয় করে। রসায়ন এখানে এমনই মজার কাজ করে!
এটা একটা মাত্র উদাহরণ, এরকম অসংখ্য উপায়ে আমরা যে খাদ্য খাই তা থেকে শরীর শক্তি সংগ্রহ করছে। কিন্তু শরীর কিভাবে বিদ্যুৎ তৈরি করে এর উত্তরে সহজে বলতে পারি রসায়ন বা রাসায়নিক উপায়ে।
(1831)