স্পন্সরড এলার্ম



কয়েক বছর আগে একটি জর্দার কৌটা দেখতে পেয়ে সেটা হাতে তুলে নিয়েছিল ছোট্ট শিশু রাজিয়া৷ সে কি আর জানতো যে, ওটা ছিল একটা হাতে তৈরি বোমা! পরিণাম – কনুই পর্যন্ত ডান হাত উড়ে গিয়েছিল তার৷
দরিদ্র পরিবারে জন্ম নেয়া রাজিয়ার মা বিভিন্ন বাড়ি থেকে পুরনো পত্রিকা জোগাড় করে সেগুলো বিক্রি করে সংসার চালাতেন৷ ঐ অবস্থায় সন্তানের এক হাত চলে যাওয়ায় বেশ দুশ্চিন্তায় পড়েছিলেন রাজিয়ার মা৷
মন খারাপ করা এই সংবাদটি চোখে পড়েছিল ড.খন্দকার সিদ্দিক-ই-রব্বানির৷ তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের‘বায়োমেডিক্যাল ফিজিক্স অ্যান্ড টেকনোলজি’ বা বিএমপিটি বিভাগের চেয়ারম্যান৷ ড. রব্বানির মাথায় একদিন একটা পরিকল্পনা আসে৷ তিনি দর্জির দোকানে সাজিয়ে রাখা মডেলের হাতকে কৃত্রিম হাতে রূপান্তরিত করার কথা ভাবেন৷

সেই থেকে শুরু৷ এরপর কয়েক বছরের গবেষণা শেষে তিনি ও তাঁর দল একটা কৃত্রিম হাত তৈরি করে ২০১২ সালে রাজিয়ার হাতের সঙ্গে সেটা সংযুক্ত করেন৷ ঐ হাত ব্যবহার করে রাজিয়া লেখা, পোশাক পরা সহ কয়েকটি কাজ করতে পারছে – যেটা তাকে স্বাবলম্বী করে তুলছে৷ বিএমপিটি বিভাগের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে, মাত্র পাঁচ হাজার টাকায় এ ধরনের কৃত্রিম হাত সরবরাহের জন্য প্রস্তুত ঐ বিভাগ৷ এছাড়া ভবিষ্যতে এই কৃত্রিম হাতের মান আরও উন্নয়নে কাজ চলবে বলেও বিবৃতিতে জানানো হয়েছে৷ কদিন আগে টেলিভিশনে প্রচারিত এক অনুষ্ঠানে ড. রব্বানি জানান, ‘‘বিদেশ থেকে যে হাতগুলো বাংলাদেশে আসে, যে হাতগুলো শুধু দেখার জন্য এবং যেগুলো কোনো কাজ করে না, সেগুলোর দামই ২০ হাজার টাকার ওপরে৷ আর যে হাত কাজ করে, অর্থাৎ যেগুলোকে ‘বায়োনিক হ্যান্ড’ বলে, সেগুলোর দাম ১০ লক্ষ টাকার ওপরে৷”
আরো সুখবর হচ্ছে এ কৃত্রিম হাতের আরো উন্নত কিন্তু স্বল্প ব্যয়ের সংস্করণ তৈরির জন্য বেক্সিমকো ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেড এর সি ও ও জনাব রাব্বুর রেজা (Mr. Rabbur Reza) গত ১৩ মার্চ, ২০১৪ তে ড. রব্বানির হাতে ৫ লক্ষ টাকার চেক তুলে দেন। উল্লেখ্য, ২০১০ সালে যখন এ গবেষণা কাজ শুরু হয় তখন আকিজ গ্রুপের ‘ফার্ম ফ্রেশ’ ব্র্যান্ড এ প্রকল্পের জন্য ১.৭ লাখ টাকা প্রদান করে।

ড. রব্বানি ১৯৫০ সালের ৯ মে জন্মগ্রহণ করেন। ১৯৭০ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পদার্থবিজ্ঞানে স্নাতক, ১৯৭২ সালে পাকিস্তানের ইসলামাবাদের কায়েদ-ই-আজম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতকত্তোর ডিগ্রি লাভ করেন। এরপর কমলওয়েলথ বৃত্তি নিয়ে পড়াশোনা করতে যান ইংল্যান্ডের সাউদাম্পটন বিশ্ববিদ্যালয়ে। এখান থেকে ১৯৭৮ সালে তিনি মাইক্রোইলেক্ট্রনিকসের উপর পি এইচ ডি ডিগ্রি অর্জন করেন। দেশে ফিরে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে নিজের বিভাগে সহকারী অধ্যাপক হিসেবে যোগদান করেন। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘বায়োমেডিক্যাল ফিজিক্স অ্যান্ড টেকনোলজি’ বা বিএমপিটি বিভাগের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি।
তথ্য সূত্রঃ ডয়েচ ভেল, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘বায়োমেডিক্যাল ফিজিক্স অ্যান্ড টেকনোলজি’ বা বিএমপিটি ‘ বিভাগের ওয়েবসাইট (http://bmpt.du.ac.bd/) ও উইকিপিডিয়া (779)
এই এলার্মটিতে ১টি এলার্মেন্টস করা হয়েছে