স্পন্সরড এলার্ম


আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙ্গানো একুশে ফেব্রুয়ারী, আমি কি ভূলিতে পারি। একুশ বাঙ্গালীর আবেগ, বাঙ্গালীর অহঙ্গকার। বাঙ্গালীর চেতনা আর ভালবাসার বহিঃপ্রকাশ। ভাষার জন্য বাঙ্গালী রাজ পথে ঢেলে দিয়েছিল বুকের তাজা রক্ত। একুশ তাই আমার গর্ব। একুশে ফেব্রুয়ারী আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস। একুশের ইতিহাস আমাদের সবার জানা। একুশ নিয়ে লেখা হয়েছে সহস্র গল্প কবিতা গান। পুরো ফেব্রুয়ারী জুড়ে চলে একুশ নিয়ে আমাদের উন্মাদনা। কাল একুশফেব্রুয়ারীর ,
আমি চিত্রপটে একুশের ইতিহাস তুলে আনার চেষ্টা করলাম।
পৃথিবীতে মায়ের ভাষার জন্য আত্মদানকারী আর কোন দেশ নেই।আর কোন জাতি নেই। সাবাশ বাংলাদেশ, এই পৃথিবী অবাক তাকিয়ে রয়, জ্বলে পুড়ে মরে ছার-খার তবু মাথা নোয়াবার নয়।
নুরুল আমিনের ১৪৪ ধারা ভেঙে রাজপথে নেমেছে ছাত্র জনতা। দৃপ্ত স্লোগানে বরকতও ছিলেন মিছিলের সাগরে। সে সময়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের শেষ বর্ষের ছাত্র বরকত। পথে নেমেছিলেন ভাষার দাবিতে, শহীদ হলেন তিনি।
২২ শে ফেব্রুয়ারী একুশের উত্তাপে উত্তাল সারাদেশ। উতপ্ত ঢাকার নওয়াবপুর রোড। বায়ান্নার ২২ শে ফেব্রুয়ারী পুলিশের গুলিতে শহিদ হলেন হাইকোর্টের হিসাবরক্ষন শাখার কেরানী শফিউর রহমান।
১৭ই এপ্রিল, শহীদ হলেন সালাম। অষ্টম শ্রেণীর পরে তিনি আর পড়াশুনো করতে পারেননি, চাকরি করতেন শিল্প দপ্তেরের রসায়ন বিভাগের ফাইল কিপার হিসেবে। উপেক্ষা করতে পারেননি ২১ এর রক্তের ডাক, তাই নেমেছিলেন রাজপথে, মিছিলে। পুলিশের গুলিতে আহত হয়ে ৪৫ দিনে হাসপাতালে মৃত্যুর সাথে যুদ্ধের পরে হার মেনে যান এই বীর।
ভাষার দাবিতে ১৪৪ ধারা আগল ভেঙে রাজপথে নেমেছে ছাত্র জনতা। দৃপ্ত স্লোগানে তাদের সাথে যোগ দিলেন জগন্নাথ কলেজের ছাত্র রফিক উদ্দিন আহামেদ। ঢাকা মেডিকেল কলেজ প্রঙ্গনে শহিদ হলেন তিনি, একুশের প্রথম শহীদ এই বীর অমর হয়ে থাকবেন ভাষার ইতিহাসে।
একুশে মানে মাথা নত না করা, একুশ মানে দুরন্ত মনে শহীদের প্রতি ভালোবাসা, প্রেম। একুশ আমাদের চেতনা।
৫২’র ২১শে ফেব্রুয়ারী, সমগ্র ঢাকা জেলায় ১৪৪ ধারা, মিটিং মিছিল নিষিদ্ধ। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কজন তরুণ দিলেন ১৪৪ ধারা ভঙ্গের ঘোষণা, বেরিয়ে এলো মিছিল, রচিত হলো মাতৃভাষার অমর কাব্যগাঁথা। ৪৮ থেকে ৫২, ভাষার লড়াইয়ে সবসময়ে সবার আগে ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয় রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম কমিটির আহবায়ক আব্দুল মতিন।
৪ঠা ফেব্রুয়ারী ১৯৫২, খাজা নাজিমুদ্দিনের ঘোষনার প্রতিবাদে সারাদেশে পালিত হলো হরতাল, ছাত্রসভা। নেতৃত্ব দিলেন ছাত্রনেতা গাজীউল হক। স্কুল কলেজ ঘুরে ছাত্রদের উদ্বিপ্ত করেণ তিনি, ২০ তারিখ রাতে সব হলের ছাত্রদের সংগঠিত করলেন। সভাপতিত্ব করেন একুশের সকালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আমতলার মিটিং এ।
১৯৪৮ সালের ১১ই মার্চ, রাষ্ট্রভাষা বাংলার দাবীতে ডাকা হরতাল কর্মসূচি পালন করতে গিয়ে গ্রেফতার হন তিনি।১৯৫২ এর জানুয়ারিতে গঠিত সর্বদলীয় রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদের আহবায়ক গোলাম মাহবুব ২১ ফেব্রুয়ারী ধর্মঘট ডাকার সিদ্ধান্ত জানান, শুরু হয় একুশের প্রেক্ষাপট।
২১ শে ফেব্রুয়ারী ১৯৫২ ঢাকায় সব রকম মিছিল মিটিং নিষিদ্ধ। ১৪৪ ধারা উপেক্ষা করে সেদিন দলে দলে রাজপথে নামতে শুরু করেছে বাংলার দামাল ছাত্র সমাজ। ১৪৪ ধারা ভাঙ্গা শিক্ষার্থীদের গ্রেপ্তার শুরু করলো পুলিশ, গ্রেপ্তার হলেন হাবীবুর রহমান শেলী। একুশের গ্রেপ্তার হওয়া প্রথম ছাত্র তিনি।
ফেব্রুয়ারী ১৯৫২ উতপ্ত ঢাকার রাজপথে ছাত্রদের পাশাপাশি ছাত্রীরাও একুশের দুপুরে ১৪৪ ধারা ভাঙ্গলেন, নেতৃত্বে ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র ইউনিয়নের নেত্রী শাফিয়া খাতুন। জাতির মিছিলে শরিক হল অন্নপূর্ণারাও। রচিত হলো একুশের রাজপথ।
১৯৫২ ভাযা সন্তানদের রক্তে রঞ্জিত একুশের বাংলাদেশ। পার্লামেন্ট বয়কট করে প্রতিবাদ জানালেন আব্দুর রশীদ তর্কবাগীশ। নরুল আমিনের প্রতি অনাস্থা জানিয়ে ছুটে গেলেন রাজপথে।
২১শে ফেব্রুয়ারী ১৯৫২ গুলি চললো ছাত্র-জনতার উপর।প্রতিবাদে গণপরিষদের অধিবেশন বয়কট করলেন ভাষাসৈনিক ধীরেন্দ্র নাথ দত্ত। রাষ্ট্র ভাষা আন্দোলনের প্রথম পর্যায়ে ‘৪৮ এর ২৩ ফেব্রুয়ারী গণপরিষদের প্রথম অধিবেশনে তিনিই প্রথম দাবি জানান বাষ্ট্র ভাষার বাংলার।
বুলেটের প্রতিবাদে উত্তাল বাংলায় শানিত কন্ঠে গেয়ে উঠেছিলেন গণসংগিত শিল্পী আব্দুল লতিফ, গেয়েছিলেন “ওরা আমার মুখের ভাষা কাইড়া নিতে চায়”!
তিনিই একুশের প্রথম গান “আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙ্গানো একুশে ফেব্রুয়ারী” এর প্রথম
সুরকার।
১৯৫২, একুশের রক্তের প্রতিবাদে উত্তাল ঢাকার নওয়াবপুর রোড। ৮ বছরের শিশু অহিউল্লাহ তখন তৃতিয় শ্রেণীর ছাত্র। তিনিও শরিক হয়েছিলেন মায়ের ভাষায় দাবিতে, পুলিশের গুলিতে ঘটনাস্থলেই শহিদ হন তিনি।
বিদ্রোহের হাওয়া তাঁকেও নিয়ে গেল মিছিলে। তিনিও স্লোগান দিলেন “রাষ্ট্র ভাষা বাংলা চাই”… গুলি চললো মিছিলে। হাটু আর কোমরে গুলিবিদ্ধ হয়ে শহীদ হলেন আব্দুল জব্বার।
১৯৫২, সারা বাংলায় চলছে একুশের রক্তের প্রতিবাদ; স্লোগানে, গানে, কবিতায়। আব্দুল গাফফার চৌধুরী লিখলেন এক অমর কবিতা ” আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙ্গানো একুশে ফেব্রুয়ারী “এই কবিতাতেই প্রথম বাংলাকে উল্লেখ করা হলো একটি দেশ হিসেবে, লেখা হলো অমর একটি নাম “বাংলাদেশ”।
১৯৫২এর ২১শে ফেব্রুয়ারীতে ১৪৪ ধারা ভাঙ্গার আগ মুহুর্তে আমতলায় গণজমায়েত।
১৯৫২ এর ২১শে ফেব্রুয়ারীতে ছাত্র জনতা
১৯৫২ এর ২২শে ফেব্রুয়ারী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কলা ভবনে কালো পতাকা উত্তোলনরত ছাত্ররা।
১৯৫২ এর ৪ঠা ফেব্রুয়ারীতে বাংলাকে রাষ্ট্র ভাষা করার দাবীতে আন্দোলনরত ছাত্র জনতার মিছিল।
১৯৫২ এর ২১শে ফেব্রুয়ারীতে নিহত শহীদের জন্য নির্মিত প্রথম শহীদ মিনার, যা রাতের আঁধারে পাকিস্তানী শাসক গোষ্ঠি ভেঙ্গে ফেলে।
১৯৫৩ এর ২১শে ফেব্রুয়ারীতে ঢাকা মেডিক্যালের সামনে নির্মিত শহীদ মিনার।
১৯৫২ এর ২২শে ফেব্রুয়ারী শহীদদের জন্য জানাযা রালি।
ঘৃনিত গর্ভনর জেনারেল মুহাম্মদ আলী জিন্নাহ।
খাজা নাজিমুদ্দিন, ঘৃনীত মুখ।
একুশ মানে মাথা নত না করা
পৃথিবীর ২৮ কোটি মানুষের ভাষা, বাংলা। পৃথিবীর ৫ম বৃহৎ ভাষাভাষী জনগোষ্ঠী। বাংলাকে জাতিসংঘের দাপ্তরিক ভাষা করা হোক।
বাংলা আমার প্রাণের ভাষা! আমি বাংলায় বাঁধি আশা, বাংলায় বাঁধি সুর… আমি বাংলায় গান গাই, আমি আমার আমিকে এই বাংলায় খুঁজে পাই।
আজ হয়তো প্রতিবাদের ভাষা জানাতে
লিখা হতোনা পোষ্টার, ফেষ্টুন কিংবা ব্যানার
যদি কিনা ভাষার তরে প্রান দিতো
রফিক, সালাম, বরকত, জব্বার
নাম না জানা কত স্বজন আর।
একটা প্রজন্ম শেষ হয়ে আসছে। আমরা কি প্রস্তুত দায়িত্ব কাধে নিতে ?
ভাষা আন্দোলনের জনক তমদ্দুন মজলিসের প্রতিষ্ঠাতা প্রফেসর আবুল কাসেমের ভাষায় তমদ্দুন মজিলস গঠিত হয়েছিল ‘বিপ্লবী ইসলামী আদর্শের ভিত্তিতে প্রতিষ্ঠিত পাকিস্তানের অর্থনীতি, রাষ্ট্রনীতি, শিক্ষানীতি প্রভৃতি বিষয়ে জনগণকে সঠিক ধারণা দেয়ার জন্য’।
একটি সাংস্কৃতিক সংগঠন হিসেবে তমদ্দুন মজলিসের আত্মপ্রকাশ ঘটলেও সংগঠনটি শেষ পর্যন্ত ভাষার প্রশ্নে জড়িয়ে পড়ে সরকারবিরোধী আন্দোলনে। তমদ্দুন মজলিস যেহেতু সাংস্কৃতিক সংগঠন, তাই ভাষা আন্দোলন পরিচালনার জন্য গঠিত হয় প্রথম ও দ্বিতীয় রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদ। আদর্শ প্রচারের জন্য তারা প্রকাশ করে সৈনিক পত্রিকা। তৃতীয় ব্লক আন্দোলন, ভাষা আন্দোলন পুস্তিকাসহ অসংখ্য বই-পুস্তক তারা প্রকাশ করেন। সমাজসেবামূলক কাজের জন্য গঠিত হয় ‘ঢাকা মজলিস’ নামে সংগঠন।
ওরা আমার মুখের কথা কাইরা নিতে চায়
ওরা আমার মুখের কথা কাইরা নিতে চায়
ওরা কথায় কথায় শিকল পরায় আমার হাতে-পায়ে
ওরা কথায় কথায় শিকল পরায় আমার হাতে-পায়ে
ওরা আমার মুখের কথা কাইরা নিতে চায়
কইতো যাহা আমার দাদা, কইছে তাহা আমার বাবায়
কইতো যাহা আমার দাদায়…
এখন কও দেহি ভাই মোর মুখে কি অন্য কথা শোভা পায় !
একুশে ফেব্রুয়ারী নিয়ে প্রথম কবিতা লিখেছিলেন মাহবুবুল আলম চৌধুরী, ‘কাঁদতে আসিনি ফাঁসির দাবি নিয়ে এসেছি’ ।
একুশের কবিতা – আল মাহমুদ
ফেব্রুয়ারির একুশ তারিখ
দুপুর বেলার অক্ত
বৃষ্টি নামে, বৃষ্টি কোথায় ?
বরকতের রক্ত।
হাজার যুগের সূর্যতাপে
জ্বলবে এমন লাল যে,
সেই লোহিতেই লাল হয়েছে
কৃষ্ণচূড়ার ডাল যে !
প্রভাতফেরীর মিছিল যাবে
ছড়াও ফুলের বন্যা
বিষাদগীতি গাইছে পথে
তিতুমীরের কন্যা।
চিনতে না কি সোনার ছেলে
ক্ষুদিরামকে চিনতে ?
রুদ্ধশ্বাসে প্রাণ দিলো যে
মুক্ত বাতাস কিনতে ?
পাহাড়তলীর মরণ চূড়ায়
ঝাঁপ দিল যে অগ্নি,
ফেব্রুয়ারির শোকের বসন
পরলো তারই ভগ্নী।
প্রভাতফেরী, প্রভাতফেরী
আমায় নেবে সঙ্গে,
বাংলা আমার বচন, আমি
জন্মেছি এই বঙ্গে।
একুশের প্রথম গান
রচয়িতা : মোশারফ উদ্দীন আহমেদ
মৃত্যুকে যারা তুচ্ছ করিল ভাষা বাঁচাবার তরে
আজিকে স্মরিও তারে।
কোথায় বরকত কোথায় সালাম
সারা বাংলা কাঁদিয়া মরে
আজকে স্মরিও তারে।
যে রক্তের বানে ইতিহাস হলো লাল
যে মৃত্যুর গানে জীবন জাগে বিশাল
সে জাগে ঘরে ঘরে
মৃত্যুকে যারা তুচ্ছ করিল ভাষা বাঁচাবার তরে
আজিকে স্মরিও তারে।
এদেশ আমার এ ভাষা আমার
এ নহে দাবী এ যে অধিকার
মরিব আবার লড়িব আবার
ভাসিব রক্ত লড়ে
আজিকে স্মরিও তারে।
গানটির রচয়িতা প্রকৌশলী মোশারফ আহমেদ। ১৯৫৩ সালের ২০ ফেব্রুয়ারি লেখা হয়েছিল গানটি। সুর করেন আলতাফ মাহমুদ।
১৯৯৯ সালে পূর্ব লন্ডনের আলতাব আলী পার্কে প্রতিষ্ঠিত আজকের শহীদ মিনারটি বাঙালির ভাষা-শহীদদের স্মরণে বহির্বিশ্বের প্রথম শহীদমিনার। এই শহীদ মিনারটি প্রতিষ্ঠার অনেক আগ থেকেই ব্রিটেন বিশেষ করে লন্ডনে বসবাসরত বাঙালিরা অস্থায়ী শহীদ মিনার প্রতিষ্ঠা করে প্রতিবছর ২১ ফেব্রুয়ারি ভাষা আন্দোলনের শহীদদের প্রতি তাদের শ্রদ্ধা নিবেদন করতেন।
ব্রিটেনে বাঙালি কমিউনিটির সর্ববৃহৎ ও প্রচীনতম সংগঠন বাংলাদেশ ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশনের উদ্যোগে পূর্ব লন্ডনের সাড়ে বায়ান্নো হ্যানবারি স্ট্রিটের একটি হলে অস্থায়ী শহীদমিনার তৈরি করে এই শ্রদ্ধা নিবেদনের ব্যবস্থা করা হতো। দীর্ঘ কয়েক বছর এভাবে শ্রদ্ধা নিবেদনের পর ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশনের নেতৃত্বে খোলা আকাশের নিচে একটি শহীদমিনার প্রতিষ্ঠার জন্যে স্থানীয় কাউন্সিলের সঙ্গে দেনদরবার শুরু হয়। এমনি এক পর্যায়ে ৮০ এর দশকে বর্ণবাদ বিরোধী আন্দোলনে শহীদ বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত আলতাব আলীর নামে নামকরণ করে পূর্ব লন্ডনের হোয়াইট চ্যাপেল রোডের পার্কে ১৯৯৮ সালের একুশে ফেব্রুয়ারি ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশনের নেতৃত্বে প্রথম অস্থায়ীভাবে একটি শহীদমিনার স্থাপন করে ভাষা আন্দোলনের শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করা হয়।
প্রথম খোলা আকাশের নিচে শহীদমিনার তৈরি করে ভাষা-শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদনের এই কর্মসূচি স্থায়ী শহীদমিনার সৃষ্টির আন্দোলনকে আরো বেগবান করে।
টাওয়ার হ্যামলেটস কাউন্সিলের সঙ্গে এ বিষয়ে দেন-দরবারের এক পর্যায়ে একটি স্থায়ী শহীদমিনার নির্মাণে কাউন্সিল-কমিউনিটি ঐক্যমতে পৌঁছতে সম হয়। কাউন্সিলের পক্ষ থেকে কমিউনিটিকে প্রস্তাব দেওয়া হয় জায়গা বরাদ্ধ দেবে কাউন্সিল, কিন্তু শহীদমিনার তৈরির খরচ বহন করতে হবে কমিউনিটিকে। এই প্রস্তাবে কমিউনিটির সম্মতির ভিত্তিতে বাংলাদেশ ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশন শুরু করে ফান্ড সংগ্রহ তৎপরতা।
এ তৎপরতায় এগিয়ে আসে বাংলাদেশ হাইকমিশন, সোনালী ব্যাংক, আওয়ামী লীগ, বিএনপি, জাতীয় পার্টি, কমিউনিস্ট পার্টি, একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি, জাসদ ও উদীচী শিল্পী গোষ্ঠীসহ ৫৪টির মতো সংগঠন। আর এই ৫৪ সংগঠনের যৌথ অংশগ্রহণে গঠন করা হয় কেন্দ্রীয় শহীদমিনার কমিটি। টাওয়ার হ্যামলেটস কাউন্সিলের প থেকে আলতাব আলী পার্কে স্থায়ী শহীদমিনার নির্মাণের প্রস্তাব দেওয়া হলে কেন্দ্রীয় শহীদমিনার কমিটি এর ব্যয় নির্বাহে সম্মতি জানায়।
ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশনসহ ৫৪টি সংগঠনের পক্ষ থেকে শহীদ মিনার নির্মাণের ব্যয় হিসেবে কাউন্সিলের কাছে তুলে দেওয়া হয় প্রায় ২২ হাজার পাউন্ড।
এভাবেই আলতাব আলী পার্কে স্থায়ীভাবে নির্মিত হয় বাঙালির আত্মপরিচয়ের প্রতীক শহীদমিনার।
এটি আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন করেন বাংলাদেশ জাতীয় সংসদের তৎকালীন স্পিকার হুমায়ুন রশীদ চৌধুরী। শেষ পর্যন্ত ১৯৯৯ সালে স্থায়ী শহীদমিনারে ভাষা-শহীদদের প্রতি প্রথমবারের মত শ্রদ্ধা প্রদর্শন করেন ব্রিটেনের বাঙালিরা।
এরকম আরো গল্প আছে পৃথিবীর নানা প্রান্তে। বাংলাকে ভালবাসার গল্প। বাংলা মায়ের দামাল ছেলেদের গল্প।
মোদের গরব, মোদের আশা
আমরি বাংলা ভাষা।
চেতনা আর মননে তোমাকেই লালন করি।
রাতে শহীদ মিনারে ঢল নামে হাজার বাঙ্গালীর।
(2358)