স্পন্সরড এলার্ম



প্রাচীন পেরুর চিকিৎসকরা আজ থেকে প্রায় ১০০০ বছর আগে মস্তিষ্কের খুলিতে অস্ত্রোপচার করতো বিভিন্ন রোগ সারানোর জন্য। অবাক হচ্ছেন? হ্যাঁ, এটাই সত্য। কিন্তু কিভাবে? সেই যুগে আজকের মতো এত উন্নত প্রযুক্তি ও জীবাণুমুক্ত অপারেশন থিয়েটার তো ছিল না। তবে ধারণা করা হয় নিজেদের উদ্ভাবিত কৌশল, এনেস্থেসিয়া ও ব্যথা উপশমকারী দ্রব্য ব্যবহার করে করে তারা তাদের রোগীদের মস্তিষ্কের অস্ত্রোপচার সম্পন্ন করতো। প্রথমে তারা রোগীর খুলিতে হাতে তৈরি ড্রিল মেশিন যন্ত্র দিয়ে ছিদ্র করতো। এই পদ্ধতির নাম হচ্ছে ট্রিপানেশন। মূলত বিভিন্ন ধরণের মাথার রোগ সারানোর জন্য এ পদ্ধতি প্রয়োগ করা হলেও অত্যন্ত উদ্ভটভাবে তারা হার্টের রোগ সারাতেও এই পদ্ধতি ব্যবহার করতো। অদ্ভুত মনে হলেও সত্যি যে পেরুতে প্রাপ্ত নানান প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শনে দেখা গিয়েছে এমন নিউরোসার্জারি ও হার্ট প্রতিস্থাপনের রঙিন ছবি!

আন্দিজ পর্বতমালার দক্ষিণ-মধ্যাঞ্চলের পেরুর আন্দাহুয়াইলাস প্রদেশে খননকাজ চালাচ্ছিলেন ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের জীবপ্রত্নতত্ত্ববিদ ড্যানিয়েলি কুরিন ও তার দল ৩২ টি দেহাবশেষ খুঁজে পান, যেগুলো ছিল ১০০০-১২৫০ সাল সময়কার। এর সাথে পাওয়া গেল, তাদের দেহের উপর চালানো ৪৫ ধরণের ‘ট্রিপানেশন’ পদ্ধতির নিদর্শন। কোন আঘাতের কারণে যদি মস্তিষ্ক অস্বাভাবিকভাবে ফুলে যেতে শুরু করতো কিংবা কেউ যদি স্নায়বিক, মানসিক কিংবা তাদের মতে অতিপ্রাকৃত শক্তি দ্বারা আক্রান্ত হতো, তবে সেই যুগে এধরণের রোগীদের মস্তিষ্কে অস্ত্রোপচারের জন্য ছিদ্র করাটা খুব সাধারণ একটি বিষয় ছিল। ১৬শ শতাব্দীতে স্প্যানিশদের উপনিবেশ স্থাপিত হওয়ার পর এ পদ্ধতি বন্ধ হয়ে যায়।
কখনো কখনো এ পদ্ধতিতে রোগী সেরে উঠতো, কখনো বা মারাও যেত কিংবা সুস্থ হয়ে উঠতো না। আর অস্ত্রোপচারের ক্ষত শুকোতে ও নতুন হাড় গজিয়ে উঠতে অনেক মাস লেগে যেত। অনেক সময় রোগীকে সারা জীবনই এই অস্ত্রোপচারের চিহ্ন বহন করতে হত। আর যারা মারা যেত তাদের মাথার খুলি চিকিৎসাবিজ্ঞান অধ্যয়নের জন্য দান করে দেয়া হতো।

তবে এই অঞ্চলে নারী ও শিশুদের উপর এই ধরণের অস্ত্রোপচার ছিল নিষিদ্ধ। আর মাথার খুলির হাড়ের উপর চালানো হত এই সূক্ষ্ম অস্ত্রোপচার, যাতে মস্তিষ্ক কোনভাবেই ক্ষতিগ্রস্ত না হয়। আর এজন্য চিকিৎসকের থাকতে হত অপরিসীম দক্ষতা। আর এ দক্ষতা বৃদ্ধির জন্য তারা মৃতদের মাথার খুলির উপর বিভিন্ন ধরণের পরীক্ষা-নিরীক্ষা চালাতো। দেহাবশেষগুলোর খুলিতে অস্ত্রোপচারের জন্য সৃষ্ট ছিদ্রের চারপাশে ভেষজ ওষধি উপাদানের উপস্থিতি পাওয়া গিয়েছে।
দেহাবশেষগুলোর বয়স নির্ণয় করার জন্য কুরিন রেডিওএক্টিভ কার্বন ডেটিং পদ্ধতি ব্যবহার করেন। তার মতে, এই উদ্ভাবন সেসময়কার মানুষগুলোর জ্ঞান-বিজ্ঞানের অগ্রগতির নিদর্শনই প্রকাশ করে। যদিও কোন এক অজ্ঞাত কারণে ৬০০-১০০০ সালের দিকে চরম উৎকর্ষ লাভ করা আন্দাহুয়াইলাস সাম্রাজ্যের পতন ঘটে।
তবে যত ব্যাখ্যাই দেয়া হোক না কেন, একদল বিজ্ঞানীর কাছে এটা এখনও মস্ত বড় ধাঁধা যে কী করে সম্ভব ছিল সেই সময়ে নিউরো সার্জারির মত এত কঠিন ও সূক্ষ্ম একটি কাজ? বর্তমানে প্রযুক্তির এই চরম উৎকর্ষতার যুগেও নিউরো সার্জারি একটি কঠিন ও ঝুঁকি পূর্ণ বিষয়। তাহলে কি করে প্রাচীন মানুষ কোনো রকম আধুনিক যন্ত্রপাতি ছাড়াই করে ফেলতো এমন জটিল সব অপারেশন? শুধু তাই নয়,এই যে এত উন্নত জ্ঞান তারা অর্জন করেছিল, সেইসব জ্ঞান কেন পরবর্তী যুগের মানুষদের মাঝে তারা প্রবাহিত করেনি। লক্ষ্য করলে দেখা যাবে যে, এত উন্নত বিদ্যার প্রমাণ যেসব প্রাচীন সভ্যতায় মিলছে সেগুলোর ধ্বংস হয়ে গিয়েছে অজানা কোনো কারণে। কিন্তু কী সেই অজানা কারণ?

তবে সবচাইতে প্রমাণ দিয়ে গেছে প্রাচীন মানুষেরা নিজেরাই। পেরু ও আশেপাশে প্রাপ্ত প্রায় প্রত্যেকটি প্রাচীন সভ্যতায় যেমন মিলেছে উন্নত জ্ঞান ও বিদ্যার প্রমাণ, একইভাবে প্রাচীন মানুষেরা এটাও বয়ান করে রেখে গিয়েছে যে এইসব জ্ঞান ও প্রযুক্তি তাদের অর্জন করা নয়। বরং তাদেরকে দান করা হয়েছিল! প্রাচীন দেবতারা আকাশ থেকে নেমে এসে দান করে গিয়েছিলেন জীবনের জন্য প্রয়োজনীয় সকল জ্ঞান।
আর তাই, বিজ্ঞানীদের একটি বড় অংশ মনে করেন যে এই আকাশ দেবতারা আর কেউই নয়, বরং ভিনগ্রহের প্রাণীরা- যাদেরকে আমরা এলিয়েন সম্বোধন করি! অন্তত প্রাচীন সকল নিদর্শন এটাই প্রমাণ করে যে আকাশ থেকে অদ্ভুত যানে চেপে নেমে আসতেন দেবতারা, এমনকি সেই প্রাচীন আকাশ যানের ছবিও দেখা যায় বৈকি।
কোনটা সত্য আর কোনটা মিথ্যা- সেটার জন্য এখন সময়ের অপেক্ষা কেবল (1934)