স্পন্সরড এলার্ম


মোবাইল অপারেটরদের ক্ষেত্রে এশিয়ার সব দেশেই ৪০ শতাংশের নিচে ‘কর্পোরেট কর’ নির্ধারণ করা হলেও শুধুমাত্র বাংলাদেশে ৪৫ শতাংশ পর্যন্ত করপোরেট কর দিতে হয়। আগামী অর্থবছরের বাজেটে এসব করসহ সিমের ওপর আরোপিত সব ধরনের কর প্রত্যাহারের দাবি জানিয়েছেন মোবাইল অপারেটরদের সংগঠন অ্যাসোসিয়েশন অব মোবাইল টেলিকম অপারেটরস অব বাংলাদেশ (অ্যামটব)। এছাড়াও মোবাইল কোম্পানির ওপর করপোরেট করের বোঝা কমানোর দাবির পাশাপাশি ইন্টারনেট মডেমসহ টেলিকম খাতের বিভিন্ন যন্ত্রাংশে কর ও শুল্ক ছাড়ের প্রস্তাব করেছে সংগঠনটি।
সংগঠনের পক্ষে জানানো হয়েছে, বর্তমানে মডেমের ওপর অগ্রিম ব্যবসায়ী কর (এটিভি) ৪ শতাংশ, আমদানি পর্যায়ে ৪ শতাংশ, সরবরাহে ৪ শতাংশ ও বিক্রির ওপর ৮ শতাংশ মূল্য সংযোজন কর রয়েছে। এটা প্রত্যাহার হলে ডিজিটাল বাংলাদেশের স্বপ্ন পূরণ অনেক সহজ হবে। জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) সম্মেলন কক্ষে ২০১৪-১৫ অর্থবছরের প্রাক-বাজেট আলোচনায় এ দাবি জানানো হয়।
অ্যামটব মহাসচিব টি আই এম নুরুল কবির ও বিভিন্ন অপারেটরদের প্রতিনিধিদের উপস্থিতিতে বৃহস্পতিবার বিকেলে এনবিআরের চেয়ারম্যান গোলাম হোসেনের সামনে বাজেট প্রস্তাবনা তুলে ধরেন মোবাইল অপারেটর রবি’র অ্যাজিয়াটা লিমিটেড’র চিফ অপারেটিং অফিসার (সিওও) মাহতাব উদ্দিন আহমদ।
প্রস্তাবনায় মাহতাব বলেছেন, বাংলাদেশের আর্থসামাজিক উন্নয়নে মোবাইল গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। আর এ মোবাইলের সিম কার্ড স্বল্প মূল্যে মানুষের হাতে পৌঁছে দিতে এর ওপর সব ধরনের কর প্রত্যাহার জরুরি। এখনো বাংলাদেশে জনসংখ্যার অনুপাতে মোবাইল ফোনের ব্যবহার অন্যান্য দেশ থেকে কম। জনগোষ্ঠীর উল্লেখযোগ্য অংশকে এ সুবিধার আওতায় আনতে কর রেয়াত প্রয়োজন। কারণ গ্রামীণ জনপদের মানুষের ক্ষেত্রে একটি সিমের জন্য ৩০০ টাকা কর দেয়া বেশ কঠিন। আবার কোম্পানিগুলোকে এ কর দিতে হলে তাদের আর্থিকভাবে বেশ চাপে পড়তে হয়।
বর্তমানে মোবাইল গ্রাহকদের প্রত্যেককে একটি সিম ও রিম কার্ডের বিপরীতে ১০৯ দশমিক ৯৬ শতাংশ টাকা মূল্য সংযোজন কর এবং ১৯০ দশমিক শূন্য ৫ শতাংশ সম্পূরক শুল্ক দিতে হয়। যার কারণে একটি সিম কার্ডের মূল্য অতিরিক্ত তিনশ টাকা আরোপিত হয়। তাই সিম কার্ডের ওপর নির্ধারিত কর প্রত্যাহার না হলে দরিদ্র জনগোষ্ঠীর জন্য মোবাইল ব্যবহার করা কঠিন হয়ে যাবে।
একটি অতীত অভিজ্ঞতা তুলে ধরে তিনি বলেন, বাংলাদেশের মার্কেট ধরতে আমরা একটি সিম ১০০ থেকে ১৫০ টাকায় বিক্রি করছি। কিন্তু প্রত্যেকটি সিমে ৩০০ টাকা কর পরিশোধ করতে হয়। এমতাবস্থায় বেশি টাকায় সিম বিক্রি করা শুরু করলে মোবাইল সিম ক্রয়কারীর সংখ্যা অর্ধেকে নেমে আসে। তাই বাধ্য হয়ে কম মূল্যে সিম বিক্রি করতে হয়। এতে করে নিয়মিত লোকসান গুনতে হয়। তাই এ সিম ট্যাক্স প্রত্যাহার না করলে মোবাইল অপারেটরদের ব্যবসা বন্ধ হয়ে যেতে পারে।
মোবাইল অপারেটরদের ক্ষেত্রে করপোরেট কর কমানো জরুরি উল্লেখ করে এশিয়ার বিভিন্ন দেশের করপোরেট করের পরিসংখ্যান তুলে ধরেন তিনি। এসময় তিনি বলেন, এশিয়ার সব দেশেই ৪০ শতাংশের নিচে এ কর নির্ধারিত থাকলেও বাংলাদেশে ৪৫ শতাংশ পর্যন্ত করপোরেট কর দিতে হয়।
বাংলাদেশ ছাড়া অন্যান্য দেশগুলোর মধ্যে পাকিস্তান ও শ্রীলংকায় ৩৫ শতাংশ, ভারতে ৩২ শতাংশ, থাইল্যান্ডে ৩০ শতাংশ এবং মালেশিয়া, চীন, ভিয়েতনাম ও ইন্দোনেশিয়াতে ২৫ শতাংশ হারে এ কর দিতে হয়। তাই প্রতিযোগিতামূলক বিশ্বে বাংলাদেশের ব্যবসার পরিবেশ টিকিয়ে রাখতে এ করের হার সহনীয় পর্যায়ে নিয়ে আসার দাবি জানান। এক্ষেত্রে তালিকাভুক্ত কোম্পানির ২৭ দশমিক ৫ শতাংশ ও তালিকা বর্হিভূত কোম্পানির ৩৭ দশমিক ৫ শতাংশ থেকে ১০ শতাংশ হারে কমিয়ে আনার দাবি করেন।
এসময় তারা আরো বলেন, বর্তমানে তালিকাভুক্ত ও তালিকা-বহির্ভূত সব ক্ষেত্রেই সর্বোচ্চ কর দিয়ে থাকে মোবাইল ফোন অপারেটররা। তালিকা বহির্ভূত অন্যান্য কোম্পানির সর্বোচ্চ কর হার ৩৭ শতাংশ হলেও মোটাইল অপারেটরদেরকে কর দিতে হয় তার চেয়ে আট শতাংশ বেশি। অন্যদিকে তালিকাভুক্ত অন্যান্য খাতের কোম্পানির কর হার সাড়ে ৩২ শতাংশ হলেও মোবাইল ফোন অপারেটরদের ১০ শতাংশ বেশি হারে এ কর দিতে হয়।
অবশ্য বর্তমানে কেবল তিনটি অপারেটরকে এ কর দিতে হয়। কারণ বাকি কোম্পানিগুলো এখনো মুনাফার মুখ দেখতে পারেনি অথবা আগে মুনাফায় থাকলেও এখন লোকসান গুনছে। এ তিন কোম্পানি হচ্ছে-গ্রামীণফোন, বাংলালিংক ও রবি। বাকি কোম্পানিগুলোর মূল মালিকানার সঙ্গে শেয়ার থাকা আন্তর্জাতিক টেলিকম গ্রুপগুলো লোকসান গুনে ইতিমধ্যে বাংলাদেশ থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে। এরমধ্যে সিটিসেল থেকে সিংটেল, রবি থেকে টিটিআই ডোকোমো ও এয়ারটেল থেকে ওয়ারিদ টেলিকম। (1308)