স্পন্সরড এলার্ম



(প্রিয়.কম)-একটা সময় ছিল, যখন আমাদের এ পৃথিবীকে মনে করা হতো এ বিশাল সৌর জগতের কেন্দ্র। মধ্যযুগে মানুষের জ্ঞান-বিজ্ঞানের অগ্রগতি আজকের মতো ছিল না। তাই তাদের পক্ষে এর বেশি তথ্য (এবং অবশ্যই তথ্যটি সঠিক ছিল না) হয়তো জানা সম্ভব ছিল না। ধীরে ধীরে মানুষ প্রযুক্তিগত উন্নয়নের সাহায্য নিয়ে প্রথমে কৃত্রিম উপগ্রহ পাঠালো মহাশূন্যে, এরপর নিজেরাই গিয়ে আটঘাঁট বেঁধে চাঁদের বুকে নেমে পড়লো। আর এখন তো পরকল্পনা চলছে মঙ্গল গ্রহীর বুকে ঘর বাড়ি বানানোর। আর এসব কিছু করতে গিয়েই মানুষ জানলো পৃথিবী এ মহাবিশ্বের কেন্দ্র নয়, বরং অতিক্ষুদ্র এক গ্রহ মাত্র। বিশাল মহাবিশ্বের তুলনায় যার আকার আসলে কিছুই নয়।

তো আমাদের পৃথিবী নামের গ্রহখানি আবার মিল্কিওয়ে নামের এক ছায়াপথের অংশ ১,৩০০ কোটি বছরেরও অনেক আগে এ ছায়াপথের জন্ম হয়েছিল৷ শুনতে অবিশ্বাস্য মনে হলেও এখনো তার গোটা কাঠামো সম্পর্কে আমরা বেশি কিছু জানি না৷ কিন্তু মানুষের আবার অজানাকে জানার অদম্য কৌতূহল। সে কারণে গাইয়া টেলিস্কোপ এই প্রথম মিল্কি ওয়ের ত্রিমাত্রিক মানচিত্র তৈরি করতে যাচ্ছে। তার জন্য এই টেলিস্কোপ স্যাটেলাইট-কে প্রায় ১০০ কোটি নক্ষত্রের পরিমাপ করতে হবে৷ হ্যাঁ, পাঠক, ভুল পড়েন নি। ১০০ কোটি নক্ষত্র! গবেষকরা এই সব তথ্যের ভিত্তিতে আমাদের ছায়াপথের বিবর্তন বুঝতে চান৷ সবচেয়ে বড় রহস্যও উন্মোচন করতে চান তাঁরা৷
গাইয়া তৈরি করতে ২০ বছরেরও বেশি সময় লেগেছে৷ স্যাটেলাইটের মধ্যে ২টি টেলিস্কোপ রয়েছে যাদের অ্যাঙ্গেল আলাদা৷ আছে এক মিটার চওড়া ক্যামেরা চিপ৷ এক হাজার কিলোমিটার দূর থেকেও মানুষের একটি মাত্র চুল পর্যন্ত চিনে নিতে পারবে এ স্যাটেলাইট৷ নক্ষত্রের দূরত্ব, অবস্থান, গতি ও আলোর বর্ণালি পরিমাপ করতে এমন সূক্ষ্ম চোখের প্রয়োজন রয়েছে৷ জোতির্বিজ্ঞানীরা এই অভিযানে আলোর স্পেকট্রাম বা বর্ণালি বিশ্লেষণের দায়িত্ব পালন করছেন৷ এ অনেকটা মহাজাগতিক আঙুলের ছাপের মতো, যা গোটা শরীরের গল্প বলতে পারে৷ নক্ষত্রের বয়স, জন্মস্থান, রাসায়নিক উপাদান৷ গাইয়া মিল্কি ওয়ে-র সীমানার নক্ষত্রগুলিও পর্যবেক্ষণ করবে৷ এই সব নক্ষত্রের বিষয়ে জোতির্বিজ্ঞানীদের আগ্রহের শেষ নেই৷ সম্ভবত অপেক্ষাকৃত ছোট ছায়াপথে জন্মের পর মিল্কি ওয়ে সেগুলিকে গিলে নিয়েছে৷ গাইয়া থেকে পাওয়া তথ্য নিয়ে গবেষকরা প্রথম বার দেখবেন, মিল্কি ওয়ে কতগুলো নক্ষত্র কাছে টেনে নিয়েছে? সেগুলিই বা কোথা থেকে এসেছে? আপাতত উত্তরের অপেক্ষা।
(611)