স্পন্সরড এলার্ম


আমাদের স্বাভাবিক দৃষ্টিশক্তি সম্পন্ন মানুষের লিখার অক্ষর যেখানে A, B, C, D – এমন ২৬ টি বর্ণ, একজন দৃষ্টি প্রতিবন্ধী মানুষের জন্য তা কেবলমাত্র ব্রেইলের ৬ টি ফোটা। ব্রেইলের ৬ টি ডটের ভিন্ন combination এর মাধ্যমেই তাদের জন্য মূলত বইগুলো লিখা হয়। আমাদের A,B,C,D তাদের কাছে এই ৬ ফোঁটার সমাবেশ। কিন্তু, আমাদের এই বর্ণের সাহায্যে আমরা টাইপ করতে পারি আমাদের স্বাভাবিক কম্পিউটারগুলোতে, কাজ করতে পারি অফিস আদালতে, পড়তে পারি বিশ্বের সকল বই। কিন্তু, যারা দৃষ্টি প্রতিবন্ধী, তারা কি কেবল ঐ ছয় ফোঁটার জগতেই সীমাবদ্ধ থাকবে? কখনই তারা লিখতে পারবে না, A, B, C, D ?
এই প্রশ্ন সামনে রেখেই বুয়েটের প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের তড়িৎ ও ইলেক্ট্রনিক কৌশল বিভাগের ৫ মেধাবী ছাত্র তৈরি করে এক অনন্য প্রজেক্ট, যার দ্বারা অন্ধরাও কম্পিউটার স্ক্রিনে লিখতে পারবে সত্যিকার A,B,C,D.
প্রজেক্টের নাম Braille to Text Converter. প্রজেক্টের মূল পরিকল্পনা করে মোঃ রেদওয়ান ইসলাম অর্ণব। এছাড়াও তার সাথে ছিল রায়হান খান, আবদুল্লাহ আবু সাইদ, আরিফুজ্জামান ফয়সাল ও কামরুজ্জামান নাহিদ। তারা সবাই বুয়েটের তড়িৎ ও ইলেক্ট্রনিক কৌশল বিভাগের তৃতীয় বর্ষের মেধাবী ছাত্র।
(বাম থেকে) আরিফুজ্জামান ফয়সাল, মোঃ রেদওয়ান ইসলাম, রায়হান খান, কামরুজ্জামান নাহিদ।প্রজেক্টের মুল কাঠামোতে আছে মোট নয়টি বাটন । ছয়টি বাটন ব্রেইলের ৬ টি ফোঁটার জন্য। একটি বাটন লেখা স্ক্রিনে উঠানোর জন্য। এবং স্পেসবার ও ডিলিটের জন্য দুটি বাটন রাখা আছে। একজন দৃষ্টি প্রতিবন্ধীমানুষকে প্রথমে এই ছয়টি বাটনের কম্বিনেশন প্রেস করতে হবে। তারপর, স্ক্রিনে লিখা উঠানোর বাটনটি প্রেস করলেই অক্ষরটি স্ক্রিনে চলে আসবে।
প্রজেক্টটি সম্পর্কে গ্রুপের প্রধান রেদওয়ান ইসলাম অর্ণব বলেন,
“প্রজেক্টটি মূলত, আমাদের ডিজিটাল ইলেক্ট্রনিক্স ল্যাবের জন্য তৈরি করা। ল্যাব প্রজেক্ট হিসেবে শুরু থেকেই চিন্তা ছিল,মহৎ এবং মানুষের জন্য কল্যাণকর ও মানুষের কাজে আসবে এমন কিছু করা। অতঃপর, অনেক চিন্তা করে এই প্রজেক্টটি বেছে নিলাম।”
“প্রজেক্টের মূল ডিজাইন আমার করা। মূলত ব্রেইলের ৬ টি ফোঁটার সমন্বয়কে ডিকোড করে, অতঃপর, সেই সিগনালকে যে কোন একটি ডিসপ্লে এর ড্রাইভারে নিয়ে যাওয়া – এটিই ছিল, এর প্রধান কাজ। শুরুতে আমরা 14 segment display driver এর সার্কিট তৈরি করে তার মাধ্যমে কাজটি করতে চাই। কিন্তু, পরবর্তীতে ব্যাপারটা আরও বাস্তবসম্মত করার জন্য, আমরা LCD display তে লিখা দেখানোর চিন্তা করি। এখানে বলে রাখা ভালো, LCD display মূলত মাইক্রোকন্ট্রোলার দিয়ে চালাতে হয়। কিন্তু, এটি মূলত fixed digital logic এর কোর্স হওয়ায়, মাইক্রোকন্ট্রোলার ছাড়া LCD display এর সার্কিটও তৈরি করি আমরা, যা ছিল আমাদের সিমুলেশনের অন্যতম চ্যালেঞ্জিং অংশ।”
“প্রজেক্টের সিমুলেশন ও PCB (printed circuit board) ডিজাইন আমার করা। হার্ডওয়্যার কানেকশনের পেছনে রায়হান ও সাইদের অবদানের কথা অনস্বীকার্য। ওরা অনেক সাহায্য করেছে। এছাড়াওআমাদের course teacher, মোঃ শাফায়াত হোসেন স্যার প্রতি মুহূর্তেই আমাদের উৎসাহ দিয়েছেন। ”
“প্রজেক্টটি অর্থাৎ দৃষ্টি প্রতিবন্ধীদের এই কীবোর্ডটি আমরা প্রাথমিকভাবে মূলত, fixed logic IC দিয়ে LCD display এর জন্য করেছি। ভবিষ্যতে এতে Microcontroller কিংবা Arduino দিয়ে কম্পিউটারের সাথে সংযোগ যোগাযোগ আরও সহজ করা হবে।”
“মূলত টেকনোলজি ব্যাবহারে দৃষ্টি প্রতিবন্ধীদের সীমাবদ্ধতার কথা চিন্তা করেই, আমরা এটি তৈরি করি। এটি মূলত, ব্রেইল অক্ষর ও আমাদের সাধারন অক্ষরের মধ্যে প্রাথমিকভাবে যোগসূত্র স্থাপনকারী এই প্রজেক্টটি। এর মাধ্যমে দৃষ্টি প্রতিবন্ধীদের বাস্তব অক্ষর টাইপিং আরও সহজ হবে। এছাড়াও সহজ হবে, শ্রুতিলিখন এবং হ্রাস পাবে হার্ডওয়্যার জগতে দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী ও দৃষ্টিশক্তিসম্পন্ন মানুষের ব্যাবধান।”
চিত্রঃ segment display এর মাধ্যমে প্রাথমিক সিমুলেশন।
চিত্রঃ LCD display এর মাধ্যমে সিমুলেশন।
চিত্র: মূল ইনপুট আউটপুট অংশ।
চিত্রঃ প্রাথমিক PCB design
চিত্রঃ সার্কিট সংযোগ দেবার পর
(1566)