স্পন্সরড এলার্ম
- রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর বাশারিয়্যাত! পর্ব-০১
- রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর বাশারিয়্যাত! পর্ব-০২
- রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর বাশারিয়্যাত! পর্ব-০৩
- কালিমার পতাকা উড়বেই। পর্ব-০১
- কালিমার পতাকা উড়বেই। পর্ব-০২


বাইরে ঝড়ো হাওয়া বইছে। মসজিদের বারান্দায় দাড়িয়ে আছে তিহান। জুমার ১ম রাকাআত নামাজের পরে যখন খতিব সাহেব দ্বিতীয় রাকাআতের জন্য দাড়িয়েছে তখন থেকেই টানা বৃষ্টি শুরু হয়েছে। মসজিদের মুসল্লিরা ছাতা নিয়ে না আসার কারণে কেউ বাইরে যেতে পারছে না। মুসল্লিদের মধ্যে কেউ নফল নামাজ পড়ছে, কেউ কুরআন তিলাওয়াত করছে, কেউ মোনাজাতের মাধ্যমে মহান আল্লাহর দরবারে তার নিজের গুনাহের স্বীকৃতি দিয়ে ক্ষমা প্রার্থনা করছে, অনেকে তিহানের মত রহমতের বৃষ্টির সৌন্দর্য্য উপভোগ করতেছে মসজিদের বারান্দায় দাড়িয়ে আর বাচ্চারা মসজিদের একপ্রান্ত থেকে অপর প্রান্তে দৌড়াদৌড়ি করছে।
তিহান উম্মুল কুরা বিশ্ববিদ্যালয় মক্কা থেকে পড়াশুনা শেষ করে দেশে এসেছে বেশ কয়েকদিন হলো। এলাকায় তার তেমন একটা পরিচিতি নেই। ছোট বেলা থেকে মাদরাসার হোস্টেলে থেকে পড়াশুনা করার কারণে তার নিজ এলাকার কয়েকজন মুরুব্বী ব্যাতীত আর কেউ তাকে চিনে না। তবে কুরআনে হাফেজ হিসেবে অনেকেই তিহানকে খুব ভালো করে চিনে।
আমিও তিহানের পাশেই দাড়িয়ে আছি। তিহানের মুখটা কেন যেন একটু বিষন্ন মনে হচ্ছে। ও আমার ছোট বেলার বন্ধু। মাদরাসায় এক সাথে পড়ার সময় তিহান আর আমি সর্বদাই ১ম অথবা ২য় স্থানে থাকতাম। আমাদের মধ্যে সর্বদাই একটা প্রতিযোগীতা চলতো পড়াশুনা নিয়ে। ওর বিষন্নতার কারণ আমি খুঁজতে চাইলাম না কারণ, ছোটবেলা থেকেই ও এমনই একটু বিদঘুটে টাইপের। হঠাৎ হঠাৎ মুখ বিষন্নতায় ভরে যায়।
আজ আমার বাসায় তিহানের দাওয়াত। আমার পড়াশুনা এখনও শেষ হয়নি। মাদরাসা থেকে কামিল (হাদীস) শেষ করে আবার ফিক্বহ তে ভর্তি হয়েছি। মাদরাসার কাছে আমরা ৪ জন একটা বাসা ভাড়া নিয়ে থাকি।।
প্রায় ১ ঘন্টা পরে বৃষ্টি কিছুটাই থামতেই মুসল্লিরা হুমড়ি খেয়ে পড়লো মসজিদ থেকে বের হওয়ার জন্য। সাথে সাথে আমরাও আর এই সুযোগ মিস করলাম না। খেতে খেতে তিহানের বিষন্নতার কারণটা আঁচ করতে পারলাম। তিহান হঠাৎই জিজ্ঞাসা করলো, আজ খতিব সাহেব যে বললো, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আমাদের মত মানুষ নয়, এটা কি ঠিক, বল?
– আমি বিষ্ময়ের দৃষ্টিতে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে বললাম, আগে ভাত খা পরে কথা বলি। উম্মুল কুরা বিশ্ববিদ্যায়ে পড়ার দরুন তিহান তার মধ্যে নজদী আক্বীদা পোষণ করতেছে, সেটা আমার বুঝতে আর বাকি রইলো না।
খাওয়া শেষে বিশ্রামের জন্য একটু পিঠ লাগালাম আমি। আর তিহান আমার রুমের মধ্যে কিতাব গুলো দেখেতেছে। আমাকে দুষ্টুমির সুরেই বললো,
– কিতাব বুঝিস তো?
– আমি: কিছুটাতো বুঝি। নয়তো শুধু শুধু টিউশনির টাকা দিয়ে কিতাব কিনে এনে সাজিয়ে কেন রাখবো?
– তিহান: মাহফিলও করছ দেখছি? (মুচকি হেসে)
– আমি: করি কিছুটা। দীর্ঘ বছর মাদরাসায় পড়লাম, মানুষকে তো সত্যের পথে ডাকতে হবে, তাই না ! আর তাছাড়া বর্তমানে যে পরিমাণ ফিৎনা ছড়াচ্ছে বিভিন্ন বাতিল মহল। সেক্ষেত্রে কিছু হক্ব কথা বলা তো ঈমানের দাবী। (হেসে হেসেই বললাম)
– তিহান: তো কেমন হক্ব কথা বলিছ শুনি ! মসজিদের খতিব সাহবের মত নাকি ? (একটা কিতাব হাতে নিয়ে দেখতে দেখতে জিজ্ঞাসা করলো।)
আমি এবার উঠে বসলাম, যেহেতু বিষয়টা আবার সামনে এলো এবার তো কিছু বলতেই হবে। টেবিলে রাখা গ্লাস থেকে পানি পান করে নিজেকে একটু শান্ত করে বললাম,
– দোস্ত তোর কি মনে আছে আমার হেড মুহাদ্দিস হুজুরের কথা?
– তিহান: মনে থাকবে না কেন? হুজুরের হাদীস পড়ানোর শব্দ আজও আমার কানে বাজে। উম্মুল কুরাতে পড়াশুনা করার সময়ও যদি হুজুরের পড়ানো কোন হাদীস সামনে আসতো, তাহলে তা অনেক সহজ মনে হতো। হুজুরের জ্ঞান ছিল অসাধারণ। এমন শিক্ষক আমি দ্বিতীয় আরেকজন পাইনি। (একটু দীর্ঘঃশ্বাস নিয়েই বললো তিহান। কেননা, হুজুর গত বছর ইন্তেকাল করেছে।)
– আমি: তুইও তো হুজুরের মতই হাদীস পড়াতে জানিস। (একটু দুষ্টুমির সুরে বাঁকা চোখে তাকিয়ে বললাম)
– তিহান: কি বলিছ! তোর কি মাথা খারাপ ! হুজুরের যেই জ্ঞান, বলতে গেলে বলতে হয় তা ছিল আল্লাহ প্রদত্ত। এমন জ্ঞান আমার আসবে কোত্থেকে।
– আমি: আরে কি বলিস তুই। তুই তো আমাদেও হুজুরের মতই। তার মত কথা বলছ, হাদীস পড়াস, তার অনেক ভঙ্গিমাই তুই রপ্ত করেছিস। (আড় চোখে তাকিয়ে বললাম)
– তিহান এবার একটু রাগ করেই বললো, দেখ বেশী বলতাছোস। হুজুরের মত জ্ঞান আমার কখনোই নাই। আর তাছাড়া হুজুর যে পরিমাণ পরহেজগার, তাহাজ্জুদ গুজারী এবং বিনয়ী একজন মানুষ। সে কিভাবে আমার মত হবে? আমিতো কোনদিক দিয়েই তার মত নয়। আর তাছাড়া হুজুরের সাথে স্বপ্নোযোগে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর দেখা হয়েছিল। আমিতো হুজুরের জুতা টানারও যোগ্য না। তার মত হব তো দুরের কথা।
আমি এবার নড়েচড়ে এক পা আরেক পায়ের মধ্যে দিয়ে আরাম করে বসলাম। টেবিলের উপর থেকে কলমটা হাতে নিয়ে সেটা ঘুরাতে ঘুরাতে বললাম,
– তুই যদি আমাদের হেড মুহাদ্দিস হুজুরের মতই না হইলি তাহলে যিনি রহমাতুল্লিল আলামীন, যার নূরানী চেহারা মুবারক দেখেই শত শত বিধর্মী ইসলাম গ্রহণ করেছেন, যিনি যেখানেই গেছেন সেখানেই বরকত হয়েছে, যার হাত মুবারকের স্পর্শে ছোট্ট বকরী এবং সামান্য আটার রুটি দিয়ে ১৪০০ শত সাহাবী তৃপ্তি সহকারে খেয়েছে, যার হাত মুবারকের বরকতে মাত্র ১ গ্লাস দুধ সকল আসাহাবে সুফফাগণ তৃপ্তি সহকারে পান করেছে, যার হাত মুবারকের ঈশারায় চন্দ্র দ্বিখন্ডিত হয়েছে, যার রক্ত মুবারক পান করার কারণে জাহান্নামের আগুন হারাম হয়ে গেছে, যার চরিত্রের সার্টিফিকেট ¯^য়ং মহান আল্লাহ তায়ালা দিয়েছেন, যাকে না ভালবাসলে আল্লাহকে পাওয়া যায় না, যার কালিমা না উচ্চারণ করলে মুমিন হওয়া যায় না, যার নাম শুনে তার উপর দুরূদ ও সালাম পাঠ না করলে তার জন্য ধ্বংসের হুশিয়ারী দেওয়া হয়েছে, যার লালা মুবারক এর উসিলায় মৃত কুপ জীবিত হয়ে পানিতে ভরপুর হয়ে গেছে, যার কদম মুবারক জমীনে ফেলার কারণে পুরো জমীনটাই পবিত্র হয়ে মুসল্লা (নামাজের স্থান) হয়ে গেছে, যাকে মহান আল্লাহ তায়ালা তার আরশে আযীমে সরাসরি দাওয়াত করে নিয়ে তার দীদার দিয়েছেন, সেই সুমহান মর্যাদাবান, সুমহান চরিত্রের মহামানব কিভাবে আমাদের মত হবে?
তিহান অবাক দৃষ্টিতে কতক্ষণ তাকিয়ে রইলো আমার দিকে! যেন মনে হচ্ছে ও এই কথাগুলো শোনার জন্য প্রস্তুত ছিল না। ও হাতের কিতাবটি আলমারীতে রেখে আমার সামনের চেয়ারে বসে বললো,
– আসলে তুই যেভাবে বললি সেভাবে কখনো ভেবে দেখিনি। আর তাছাড়া সব মানুষই তার বিভিন্ন যোগ্যতার দিক দিয়ে একজন আরেকজনের মত নয়। কিন্তু একটা দিক দিয়ে সবাইতো একই রকম।
( মনে মনে ভাবলাম, যাক অন্তত এতটুকু বুঝছে যে যোগ্যতা, মেধা এবং বিভিন্ন ধরনের গুনাগুনের কারণে মানুষ একজন আরেকজনের মত হয় না। )
তিহানের কথা শেষ হতে না হতেই পাশের রুম থেকে রাসেল চিৎকার করতে করতে এসে বললো, কি খেলা দেখাইলোরে দোস্ত। কি খেলা দেখাইলো।
আমি কিছু জিজ্ঞাসা করার আগেই বললো সাকিবের সেঞ্চুরী হযে গেছে। আজকে বাংলাদেশ ইন্ডিয়ারে নির্ঘাত কুপায়ালাইবো। আমি বললাম, তুইও তো সাকিবের মতই। (আমার হঠাৎ এমন কথায় ও কিছুই বুঝে উঠতে না পেরে, হাসিটা বন্ধ করেই বললো, মানে ? কি বলতে চাস?)
– হাসিটা চেপে রেখে বললাম তুইও তো সাকিবের মত পিটাস।
রাসেল এবার মুখ বাঁকা করে বললো, ধুর, কি সব আবোল তাবোল বলতাছোছ এইসব! তোর মাথা কি নষ্ট হয়া গেছে নাকি। কার সাথে কার তুলনা দেস। ব্যাট ধরতে পারলেই কি সাকিব হওয়া যায় নাকি? সাকিবের মত হতে হলে ওর মত যোগ্যতা থাকা লাগে।
(মনে মনে ভাবলাম, ক্রিকেটার সাকিবের মতও মানুষ নিজেকে মনে করে না। অথচ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কে নিজের মত মনে করে। কি আশ্চার্য জীব আমরা।)
এটা বলতে বলতে ও আবার পাশের রুমে গিয়ে আবদুল্লাহ আর ফাহাদের সাথে খেলা দেখতে বসলো। তিহান এগুলো দেখে একটা অট্টো হাসি দিয়ে বললো, তুই পারোছও বটে!
রাসেল খুব ভদ্র একটা ছেলে। ঢাবি থেকে মাস্টার্স শেষ করে বিসিএসের প্রস্তুতি নিচ্ছে। পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়ে। কিছুদিন আগে তাবলীগের ৩ চিল্লা শেষ করে আমীর সাহেব হয়ে আসছে।
– চলবে (1951)