স্পন্সরড এলার্ম
- রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর বাশারিয়্যাত! পর্ব-০১
- রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর বাশারিয়্যাত! পর্ব-০২
- রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর বাশারিয়্যাত! পর্ব-০৩
- কালিমার পতাকা উড়বেই। পর্ব-০১
- কালিমার পতাকা উড়বেই। পর্ব-০২


( বাশার মানেই মাটির তৈরী নয়। বাশার মানে মানব আকৃতি )
তিহানের দিকে তাকাতেই তিহান বললো, তোর কথা একদম ঠিক। কিন্তু সকল মানুষই মাটির তৈরী। সেই দিক বিবেচনা করলে সব মানুষই একজন আরেক জনের মত।
সেই দৃষ্টিকোণে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামও আমাদের মত। আর তাছাড়া আল্লাহ তায়ালা পবিত্র কুরআনে সূরা কাহাফের ১১০ নং আয়াতে বলেছেন, قُلْ إِنَّمَا أَنَا بَشَرٌ مِّثْلُكُمْ “হে রাসূল, আপনি বলুন, আমি তোমাদের মত একজন মানুষ”। এ আয়াত থেকেই স্পষ্ট বুঝা যায় যে, আমরা যেহেতু মাটির তৈরী সেহেতু তিনিই আমাদের মতই মাটির তৈরী মানুষ। এই দিক দিয়ে তিনি আমাদের মত।
আমি ওর চেহারার দিকে অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছি। ও এখনো কত সরলভাবে চিন্তা করে। ওকে যা বুঝানো হয়েছে সেই বিশ্বাসই এখনও পোষণ করছে। একবারও চিন্তা করলো না যে, এই আয়াতের দ্বারা প্রকৃত পক্ষে কী বোঝানো হয়েছে ! দেয়ালের উপর থেকে একটা টিকটিকি হঠাৎ ডেকে উঠলো। আবার একটু নড়েচড়ে বসে আরেক গ্লাস পানি পান করে শান্ত হয়ে বললাম,
বাশার অর্থ মাটির তৈরী মানুষ, এটা তোকে কে বললো? তুই কি প্রমাণ করতে পারবি বাশার মানে হচ্ছে মাটির তৈরী মানুষ?
তিহান একটা অট্ট হাসি দিয়ে বললো, তুই না একটু আগে বললি কিতাব বুঝোছ! এই তোর কিতাবের জ্ঞান! আরেহ বোকা তুই কি জনিস না পবিত্র কুরআনের সূরা সা’দ এর ৭১ নাম্বার আয়াতে আল্লাহ তায়ালা বলেছেন إِنِّي خَالِقٌ بَشَرًا مِّن طِينٍ নিশ্চয়ই আমি মানুষকে মাটি থেকে সৃষ্টি করেছি। (ওর হাসি যেন আর থামে না)
(আমি মনে মনে বললাম, ইয়েস, এইবার তুই লাইনে আসছোছ, এই সময়টার জন্যই অপেক্ষা করতেছিলাম।)
ওর বাহুর উপরে ছোট্ট একটা দুষ্টুমির চড় মেরে বললাম, আল্লাহ তায়ালা মুমিনদেরকে নামাজ পড়তে নিষেধ করেছেন এটা জানিস?
সূরা নিসা এর ৪৩ নম্বর আয়াতে আল্লাহ তায়ালা বলেছেন, يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا لَا تَقْرَبُوا الصَّلَاةَ তোমরা যারা ঈমান এনেছ তারা নামাজের নিকবর্তী হয়ো না। (মুচকি হেসে বাঁকা চোখে তাকিয়ে বললাম।)
এবার তিহান একটু বিরক্তবোধ করে বললো, ব্যাটা তুই দেখছি কিতাবাদীর কিছুই বুঝিছ না। এই কথার মাঝেই পাশের রূম থেকে ফাহাদ আফসোস করতে করতে আসলো, ইস! ১২৪ রানে সাকিব আউট।
– কোন দিক দিয়ে বুঝলাম না? (আমার পাল্টা প্রশ্ন)
– তুই কি এই আয়াতে পরের অংশ দেখছ নাই? সেখানে বলা হয়েছে, মদ্যপান অবস্থায় নামাজের কাছে যাওয়ার কথা, বোকা কোথাকার।
– আমি মুচকি হেসে বললাম, إِنِّي خَالِقٌ بَشَرًا مِّن طِينٍ আয়াতের আগের এবং পরের অংশেও তো বলা হয়েছে
إِذْ قَالَ رَبُّكَ لِلْمَلَائِكَةِ إِنِّي خَالِقٌ بَشَرًا مِّن طِينٍ (৭১) فَإِذَا سَوَّيْتُهُ وَنَفَخْتُ فِيهِ مِن رُّوحِي فَقَعُوا لَهُ سَاجِدِينَ (৭২) فَسَجَدَ الْمَلَائِكَةُ كُلُّهُمْ أَجْمَعُونَ (৭৩) إِلَّا إِبْلِيسَ اسْتَكْبَرَ وَكَانَ مِنَ الْكَافِرِينَ (৭৪)
“যখন তোমাদেও রব ফেরেস্তাদের বললেন, আমি মাটি দিয়ে বাশার তৈরী করব। আর যখন ইহার আকৃতি দেওয়া শেষ হবে অতঃপর ইহার মধ্যে রূহ প্রবেশ করানো হবে। তখন তোমরা তার প্রতি সেজদায় পতিত হবে। অতঃপর ইবলি ব্যাতীত সকল ফেরেস্তগন তার প্রতি সেজদায় পতিত হলো।”
এই আয়াতের আগে এবং পরের অংশ দ্বরা এটা দিনের মত স্পষ্ট যে, এখানে মাটি থেকে তৈরী বাশার দ্বারা হযরত আদম আলাইহিস সালাম কে সৃষ্টি করার কথা বলা হয়েছে।
শুধু তাই নয় পবিত্র কুরআনে সূরা আর রহমানের ১৪ নং আয়াত, সূরা রূম-২০, সুরা হাজ্ব-৫, সূরা সাফফাত-১১, সূরা মু’মিন: ১২-১৩, সূরা ফাতির: ১১, সূরা আন’আম:২, সূরা ত্বহা: ৫৫ এবং সূরা আলে ইমরান: ৫৯ নাম্বার আয়াতে মাটি থেকে মানুষ সৃষ্টির কথা বলা হয়েছে। এই আয়াগুলোতে মানুষকে মাটি দ্বারা সৃষ্টির উদ্দেশ্য একমাত্র আদম আলাইহিস সালাম কে বুঝানো হয়েছে। বিশ্ববিখ্যাত প্রায় সকল তাফসীর গ্রন্থে এই কথাই বলা হয়েছে।
আর বাকী সকল মানুষকে আল্লাহ তায়ালা পানি থেকে সৃষ্টি করেছেন। কুরআনে বহু আয়াতে বলা হয়েছে যে, মানুষকে আল্লাহ তায়ালা নুৎফা, আলাক্ব, রাক্তপিন্ড স্ববেগে নির্গত পানি থেকে সৃষ্টি করেছেন। যেমন সূরা আলাক্ব এর ২ নং আয়াতে বলেছেন خلق الانسان من علق আমি মানুষকে সৃষ্টি করেছি রক্তপিন্ড তথা শুক্রবিন্দু হতে। সূরা নাহল এর ৪ নং আয়াতে বলা হয়েছে خلق لانسان من نطفة আমি মানুষকে নুৎফা তথা শুক্র বিন্দু হতে সৃষ্টি করেছি।
এমনিভাবে সূরা ত্বরিক:৫, সূরা ইনসান/দাহর: ২, সূরা মুরছালাত: ২০-২১, সূরা সাজদা: ৭-৮, সূরা ইয়াসিন: ৭৭, সূরা নাজম: ৪৫-৪৬, সূরা নূর: ৪৫ এবং সূরা আবাসা: ১৮-১৯। এই আয়াত গুলো পরিষ্কারভাবে উল্লেখ রয়েছে যে, মানুষ কে আল্লাহ তায়ালা পানি, নুৎফা, রক্তপিন্ড থেকে সৃষ্টি করেছেন।
ফাহাদ হুট করেই বলে উঠলো। কি সব বলছ তুই। ছোট বেলা থেকে শুনে আসছি মানুষ সৃষ্টি মাটি থেকে। (ফাহাদ পায়ের গোড়ালী উপরে একটু লুঙ্গী উঠিয়ে চুলকিয়ে বলল) এই দেখ সাদা হয়ে গেছে, চুলকানির কারণে। আমরা মাটি থেকেই বলে হাতে পায়ে চুলকালে এমন সাদা হয়ে হয়ে যায়।
আমি আর তিহান ফাহাদের সরল কথা শুনে অট্টহাসিতে ফেটে পড়লাম। ফাহাদ একটু লজ্জা পেয়ে অন্য রূমে চলে যেতে যেত বললো, বুঝিনা ভাই, তোরা আলেম মানুষ কি সব বলছ। ছোট বেলা থেকে শুনে আসতেছি, আম্মাও সব সময় কইতো এই কথা। আর তোরা কি কস কে যেন। (ওর কথা শুনে আমাদের হাসি আর থামে না)
ফাহাদ গ্রামের ছেলে। সম্পর্কে আমার দূর সম্পর্কের আত্নীয়। গ্রাম থেকে অনার্স শেষ করে। ঢাকা এসেছে চাকরীর খোঁজে। কোথায় থাকবে? তাই আমার এখানে নিয়ে এসেছি। চাকরী পেলে হয়তো অন্য কোথাও চলে যাবে। ওর মধ্যে কোন ধরনের পেঁচ নেই। যা বলবে সব সোজা সাপ্টা কথা।
এইবার তিহানের কপালে একটু ভাঁজ পড়লো। ও কিছু বলার আগেই আমি বললাম, সবচেয়ে আশ্চার্যের ব্যাপার হচ্ছে, পানি থেকে সৃষ্টি মানুষকেও আল্লাহ তায়ালা বাশার বলেছেন সূরা ফুরকানের ৫৪ নং আয়াতের মধ্যে। وهو الذى خلق من الماء بشر আর তিনি বাশারকে সৃষ্টি করেছেন পানি হতে।
এখন তুই কি বলবি? মাটি থেকে সৃষ্টি আদম আলাইহিস সালাম কেও আল্লাহ তায়ালা বাশার বলে সম্বোধন করেছেন, আবার পানি থেকে সৃষ্টি সমস্ত আদম সন্তানকেও আল্লাহ বাশার বলে সম্বোধন করেছেন। শুধু এখানেই সীমাবদ্ধ নয়। নূরের তৈরী মানুষের আকৃতির ফেরেশতাকেও আল্লাহ তায়ালা বাশার বলে সম্বোধন করেছেন। আল্লাহ তায়ালা সূরা মারইয়ামের ১৭ নং আয়াতে বলেছেন: فَاتَّخَذَتْ مِن دُونِهِمْ حِجَابًا فَأَرْسَلْنَا إِلَيْهَا رُوحَنَا فَتَمَثَّلَ لَهَا بَشَرًا سَوِيًّا অতঃপর সে (মারইয়াম) তাদের থেকে নিজেকে আড়াল করার জন্য পর্দা করলো। অতঃপর আমি তার নিকট আমার রূহ প্রেরণ করলাম। সে তার নিকট পূর্ণ মানব আকৃতিতে আতœপ্রকাশ করলো।
– তিহান একটু কাশি দিল। (সম্ভবত ইচ্ছা করে)
আমি ওর কপালে স্পষ্ট শুভ্র ঘামের স্রোত দেখতে পেয়েও না দেখার ভান করে আবার বলতে লাগলাম। আমরাতো জানি ফেরেশতা নূরের তৈরী সে যখন মানব সূরত ধারণ করলো তখন তাকে আল্লাহ তায়ালা বাশার বললেন। মাটিকে আল্লাহ যখন মানব আকৃতিতে তৈরী করলেন তখন তাকে বাশার বললেন। আবার যখন নুৎফা বা পানি থেকে আদম সন্তান জন্ম নিলেন তখনও তাকে বাশার বললেন। এর অর্থ এটাই দাড়ায় যে, বাশার অর্থ কখনোই মাটির তৈরী মানুষ নয় বরং মহান আল্লাহ তায়ালা মানবীয় আকৃতিকে বাশার বলে সম্বোধন করেছেন। এই মানব সূরতের নাম হলো বাশার। কি ঠিক বলেছি আমি?
– তিহান একটু অ¯^স্তির সাথেই বললো হ্যাাাাাাা ! ঠিইই্ইক। (মুখ গম্ভীর করে)
আমি তিহানের দিকে টিস্যু এগিয়ে দিয়ে বললাম। নে ঘাম মুছে নে। আর তাছাড়া এখানে তুই লজ্জা পাচ্ছিস কেন? আমরা আমরাইতো। এটা বলেই আমরা দুজনেই হেসে দিলাম। দেয়ালের উপর থেকে হঠাৎ করে টিকটিকিটাও টিকটিকটিকটিক করে উঠল।
– চলবে (1955)