স্পন্সরড এলার্ম
- রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর বাশারিয়্যাত! পর্ব-০১
- রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর বাশারিয়্যাত! পর্ব-০২
- রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর বাশারিয়্যাত! পর্ব-০৩
- কালিমার পতাকা উড়বেই। পর্ব-০১
- কালিমার পতাকা উড়বেই। পর্ব-০২


আবদুল্লাহ ওপাশ থেকে চা নিয়ে আসলো। এবার একটু চা খেয়ে নে। অনেক তর্ক করছিস। এই সব বিষয় নিয়ে তর্ক না করে ফরজ ইবাদাতের কথা বল। মানুষ নামাজ পড়ে না ঠিক মত আর তুই আছোস কে কিসের তৈরী তা নিয়ে।
আবদুল্লাহ আমার ক্লাসমেট। একটা সময় ছাত্র শিবিরের কেন্দ্রীয় সভাপতি ছিল। কিন্তু এখন আর রাজনীতি করে না।
– আমি: দোস্ত নামাজ পড়তে পারে না এমন কয়জন মুসলিম রয়েছে?
– আবদুল্লাহ: হুম ঠিক বলছিস। এমন মানুষের সংখ্যা তেমন বেশী না।
– আমি: রোজা রাখতে পারে না সঠিক নিয়মে এমন মানুষ কি আছে বল?
– আবদুল্লাহ: উমমমম, না মনে হয়। (চিন্তায় মগ্ন হয়ে মুখ বাকা করে উত্তর দিল)
– আমি: হজ্ব আর যাকাত তো সবার উপরে ফরজও হয়নি। তাহলে ফরজ ইবাদতের কী বাকি থাকলো বলতো?
– অবদুল্লাহ: না তোর কথা ঠিক আছে। (নিজের অনিচ্ছা স্বত্তেও স্বীকার করে নিল)
তিহান চায়ের কাপে শেষ চুমুক দিয়ে টেবিলের উপর কাপ রাখতে রাখতে বললো, আবদুল্লাহ ভাই, আপনার বিবাহের পর ভাবী আপনার চা খেয়ে নিশ্চিত আপনাকে একটা চায়ের দোকান দিতে বলবে। ওর কথা শুনে সবাই অট্টহাসিতে হারিয়ে গেলাম।
পরক্ষণেই তিহান আমাকে প্রশ্ন করলো, ওকে, দলীল থেকে বুঝা যায় আদম আলাইহিস সালাম ব্যাতীত অন্য কেউ মাটির তৈরী নয়, পানি বা নুৎফার তৈরী। কিন্তু এই নুৎফাতো মাটির নির্যাস, মাটি থেকে উৎপাদিত খাবার খেয়েই তো তৈরী হয় তাই না? তাহলেতো মানুষ মাটির ই? মাটি থেকে খাবার, খাবার থেকে নুৎফা, নুৎফা থেকে মানুষ। সুতরা মাটি থেকে মানুষ? (অনেক্ষণ চিন্তা করে একটু সিরিয়াস মুডেই বললো কথা গুলো)
তিহানের কথা শেষ হতে না হতেই পাশের রূম থেকে ফাহাদ আর রাসেল আসলো। রাসেল বললো, ওহ তোরা তো ভালই চায়ের পার্টি দিয়েছিস দেখা যায়! তাও আবদুল্লাহর বানানো চা ! বেচারা একটা দোকান দিলেই পারোছ? (আবারো সেই অট্টহাসি)।
অট্টহাসির দরূন তিহান কাশি দিতে লাগলো। সম্ভবত নিজেকে কন্ট্রোল করতে পারে নি। আমি দৌড়ে গিয়ে ফ্রিজ থেকে এক গ্লাস বরফ নিয়ে ওকে দিয়ে বললাম, নে নে তাড়াতাড়ি খেয়ে নে! তিহান অবাক দৃষ্টিতে আমার দিকে তাকিয়ে ভাঙ্গা ভাঙ্গা কর্কশ কণ্ঠে মাঝে মাঝে কাশি দিয়ে আমাকে বললো,
– সিরিয়াস সময়ে এটা কেমন ফাজলামো?
– কেন বরফ তো পানি সরাসরি জমাট বেঁধে হয়েছে অন্য কোন মাধ্যম নাই মাঝখানে। তাহলে এটা খেতে সমস্যা কোথায়?
– পানি পান করা যায় বরফ পান করা যায় না এটা নিশ্চয়ই তোকে বুঝিয়ে দিতে হবে না। (কর্কশ কণ্ঠে মাঝে মাঝে কাশি দিয়ে)
বাকি ৩ জন আমার দিকে এমন দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে মনে হচ্ছে আমি যেন একটা এলিয়েন। রাসেল কে পানি আনতে বলে আমি তিহানে উদ্দেশ্যে এবার বলতে লাগলাম,
বরফ সরাসরি পানির জমাটবাধা রূপ। গললেই সরাসরি আবার আগের মত বিশুদ্ধ পানিতে রূপান্তরিত হয়। তা ই তুই খেতে পারলি না। কারণ এটা বরফ। পানি থেকে তৈরী এবং পানির গুনাগুন এর মধ্যে সরাসরি থাকলেও এটা আর পান করার উপযোগী নেই। কেননা, পানির স্তর থেকে এটা বরফের স্তরে চলে গেছে।
এর মধ্যেই রাসেল পানি নিয়ে আসলো। সাথে সাথেই তিহান এক ঝটকায় রাসেলের হাত থেকে তা নিয়ে পুরোটা একদমে পান করে নিল।
আমি ওর অবস্থা দেখে হাসতে হাসতে আবার বলতে লাগলাম,
আরেকটু সহজ করি। একটা মুরগী মাঠে মাঠে ঘুরে ময়লা অবর্জনা খায়, কেঁচো খায়। মুরগীর গোস্তে কিন্তু কেঁচোর নির্যাস রয়েছে। কিন্তু আমরা কখনোই বলি না যে, আমরা কেঁচো খেয়েছি! কেননা, কেঁচো একটা পর্যায়ে গিয়ে পাকতন্ত্রের মাধ্যমে সেটা মুরগীর গোস্ত হওয়ার জন্য সাহায্য করে। অর্থাৎ এক স্তর থেকে অপর স্তরে চলে যায়। তখন সেটা আর কেঁচো থাকে না।
আমার কথা শেষ হতে না হতেই ফাহাদ ওয়াক ওয়াক করতে করতে ওয়াশরূমে চলে গেল। ওর এই অবস্থা দেখে আমাদের হাসি আর থামে না। (আজকের দুপুরে মুরগীর গোস্ত ছিল। আর ও কেঁচো অনেক ঘৃণা করে।)
এই যে দেখ এই বিল্ডিংটা ইট, বালু, সিমেন্ট দিয়ে তৈরী। কিন্তু কেউ কখনো বলে না যে, এটা মাটির ঘর। মাটির ঘর বলতে সরাসরি মাটির ঘরকেই সকলে বুঝে। কিন্তু মাটি যখন আগুনে পুড়ে শক্ত হয় তখন সেটা ইটে রূপান্তরিত হয়। মাটির উপাদান থাকলেও সেটা পাথরের শ্রেনীতে অন্তভর্‚ক্ত হয়ে যায়। অর্থাৎ কোন কিছু এক স্তর থেকে অন্য স্তরে চলে গেলে সে আর আগের গুনাগুন এবং নামে থাকে না। যদি এমনটা না হতো তাহলে জৈব সারের (পঁচা গোবর বা প্রাণীর বিষ্টা সার হিসেবে ব্যাবহার করা) ফসল কেউ খেত না। ঠিক কিনা?
– তিহান মাথা নেড়ে হ্যা সূচক শব্দ বুঝালো।
সুতরাং মাটি তার পরের স্তর ইট এবং পানি তার পরের স্তর বরফে পরিণত হলেই যদি তার নাম, ব্যাবহার, উপাদান এবং স্তর পরিবর্তন হয়ে যায়। তাহলে মাটি থেকে ফসল, ফসল থেকে খাবার, খাবার থেকে নুৎফা এবং নুৎফা থেকে মানুষ অর্থাৎ পাঁচ স্তর পরের মানুষকে মাটির তৈরী বলা কতটুকু যুক্তিসঙ্গত? তুই ই বল!
তিহানের মুখে কথা নেই। আবদুল্লাহ বলে উঠলো, এ বিষয়েই তোদের এত কথা কেন বলতো? ফরজ না হয় আমরা সবাই জানি। ওয়াজিব সুন্নাত নিয়ে তাইলে কথা বল। যেটা কোন মুস্তাহাবের মধ্যেও পড়ে না, সেটা নিয়ে কেন তোরা তর্ক করা শুরু করছিস?
আমি এক গ্লাস পানি খেয়ে শান্ত হয়ে বললাম, তুই তো সব সময় জাকির নায়েকের লেকচার শুনিস। তাহলে বলতো অন্য ধর্ম আর ইসলাম ধর্মের মধ্যে প্রধাণ পার্থক্যটা কোথায়?
– ওরা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কে নবী হিসেবে গ্রহণ করেনি। আমরা করেছি। এটাইতো পার্থক্য। (কিছুক্ষণ চিন্তা করে এ কথা বললো।)
আমি: ইয়েস! অন্য ধর্মাবলী এবং ইসলামের মধ্যে এটাই পার্থক্য। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ই হচ্ছেন ঈমান। কেউ শুধু লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ বললেই মুসলিম হতে পারবে না, যতক্ষণ না সে মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলবে। অর্থাৎ নবীর প্রতি ঈমান আনবে। শুধু ঈমান এনেই বসে থাকলে হবে না, নবীকে ভালবাসতে হবে, তাকে অনুসরণ করতে হবে। কেননা, তাকে অনুসরণ করলেই আল্লাহ কে পাওয়া যাবে। সূরা আলে ইমরানের ৩১ নম্বর আয়াতে এটাই পরিষ্কারভাবে বলা হয়েছে। তাছাড়া ঈমান তখনই মজবুত হবে, যখন তার ব্যাপারে আমাদের স্বচ্ছ ধারনা থাকবে।
তাকে অনুসর করতে হলে সর্ব প্রথম তাকে চিনতে হবে, তার সুন্নাত সম্পর্কে জানতে হবে। সুন্নত এর ব্যাপারে সবাই কমবেশী অবগত কিন্তু তাকে ঠিকভাবে চিনে কয়জন?
তিহান বললো, তিনি রাসূল তা তো আমরা জানি ই। এটার মাধ্যমেইতো চেনাজানা হয়ে যায়।
আমি: একদিক দিয়ে তোর কথা ঠিক আছে। কিন্তু এতটুকুই কি যথেষ্ট? তিনি শুধু রাসূল হিসেবেই দুনিয়াতে আসেননি। তিনি আল্লাহর সমস্ত জগতের জন্য রহমত হিসেবেও এসেছেন। (সূরা আম্বিয়া: ১০৭) আর তার সবচেয়ে বড় পরিচয় হচ্ছে, তিনি আল্লাহর হাবীব। তাই তাকে মহব্বত করতে হলে, তার ব্যাপারে সর্বোচ্চ আদব রেখে কথা বলতে হবে। তার ব্যাপারে এমন কোন মন্তব্য করা যাবে না যেটা তার প্রতি বেয়াদবি হয়। তার ব্যাপারে আয়াতের ব্যাখ্যা খুব সাবধানে গ্রহণ করতে হবে। কেননা আল্লাহ তায়ালা সূরা হুজুরাতের ২ নং আয়াতে বলেছেন:
يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا لَا تَرْفَعُوا أَصْوَاتَكُمْ فَوْقَ صَوْتِ النَّبِيِّ وَلَا تَجْهَرُوا لَهُ بِالْقَوْلِ كَجَهْرِ بَعْضِكُمْ لِبَعْضٍ أَن تَحْبَطَ أَعْمَالُكُمْ وَأَنتُمْ لَا تَشْعُرُونَ
অর্থাৎ হে ঈমানদারগণ, আমার নবীর কণ্ঠস্বর থেকে তোমাদের কণ্ঠস্বর উচু করো না এবং তার সামনে এমনভাবে চেঁচামেচি করে কথা বলো না যেমনিভাবে তোমরা একে অপরের সাথে বলে থাক। তাহলে তোমাদের আমল সমূহ নষ্ট হয়ে যাবে কিন্তু তোমরা বুঝতেও পারবে না।
সাহাবীদের মধ্যে সর্বশ্রেষ্ঠ দুজনকেই (হযরত আবু বক্বর সিদ্দীক ও ওমর ইবনুল খাত্তাব রদিয়াল্লাহু আনহুমা) একটু স্বর উচু হওয়ার কারণে আল্লাহ তায়ালা এমন কড়া ভাষায় ধমক দিয়েছেন। আর আমরা কোন মহান ব্যক্তি শুনি?
এর মধ্যেই ফাহাদ ফ্রেশ হয়ে এসে বললো, তুই আর মানুষ হবি না। ভালো কথার মধ্যেও এসব আজেবাজে কথা বলার অভ্যাস আর গেল না তোর। (ওর কথা শুনে সকলেই হেসে দিলাম।)
রাসেল খুব শান্ত ভাবেই কথা গুলো শুনতেছে। তিহান কিছু বলতে গিয়েও আর বললো না। (হয়তো বুঝে গেছে এরপর আমি কি বলবো।) কিন্তু আবদুল্লাহ বললো, তোর কথা বুঝলাম। তাহলে এর সাথে বাশার শব্দের কি সম্পর্ক?
(মনে মনে বললাম এইতো আমার মনের মত একটা প্রশ্ন করছোস। এই অপেক্ষাই করছিলাম।)
আল্লাহ তায়ালা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কে বাশার বলেছেন। এই বাশার এর সাথে শুধু যে মাটিরই সম্পর্ক এমন নয়। কেননা, আল্লাহ পানি এবং মাটি উভয় থেকেই বাশার সৃষ্টি করার কথা বলেছেন। এছাড়াও নূরের তৈরী ফেরেশতা হযরত জিরবাঈল আলাইহিস সালাম যখন মানুষের আকৃতি ধারণ করে। তখনও আল্লাহ তায়ালা তাকে বাশার বলে আখ্যায়িত করেছেন। (পূর্বে বিস্তারিত কুরআনের আয়াতের মাধ্যমে আলোচনা হয়েছে।)
এই তিন স্থানে বাশার কি কি দিয়ে সৃষ্টি হতে পারে সে ব্যাপারে সরাসরি নস দ্বারা প্রমাণিত। সুতরাং বাশার শব্দের অর্থ শুধুই মাটির তৈরী মানুষ বলা কি কুরআনের অপর আয়াত বিরোধী নয়?
সকলেই চুপ।
আমি একটু কাশি দিয়ে আবার বলতে শুরু করলাম, যেহেতু ৩ উপাদানের কথা রয়েছে বাশার সৃষ্টির ব্যাপারে সেহেতু বাশার অর্থ হচ্ছে “মানবাকৃতি”।
অর্থাৎ আল্লাহ তায়ালা বলেছেন, হে রাসূল আপনি বলুন, আমিতো তোমাদের মতই আকৃতিতে একজন মানুষ। এছাড়াও আমি তোমাদের মত খাওয়া দাওয়া করি, বিয়ে করি, ঘুমাই ইত্যাদী ইত্যাদী। এখন এই বাশার মানে শুধু মাটি বলে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর দিকে ইঙ্গিত করা কী তার সাথে বেয়াদবি এবং কুরআনের আয়াতের ভুল ব্যাখ্যার শামিল নয় কি? অথচ বাশার এর সৃষ্টি উপাদান তিনটির যে কোন একটি হতে পারে। কি ঠিক বলেছি???
এবারও সকলেই চুপ। সকলেই ফ্লোরের দিকে তাকিয়ে কি যেন ভাবছে। নীরব নিস্তদ্ধ একটা পরিবেশ বিরাজ করতেছে।
– চলবে (2127)