আধুনিক বিজ্ঞানের সবচেয়ে আলোচিত এবং লোভনীয় থিওরি হচ্ছে টাইম ট্রাভেলিং এবং টাইম ডিলেশন। যেই ধারণা আইনেস্টাইন এর থিওরি অফ রিলেটিভিটি থেকে এসেছে। লোভনীয় বলার কারণ হচ্ছে, বিজ্ঞানীদের ধারনা তারা এর মাধ্যমে লক্ষ বছর বেঁচে থাকবে।
একটু ব্যাখ্যা করে বললে, গতিশীল বস্তু তার গতির কারণে স্থিতিশীল বস্তুর তুলনায় কম সময় অতিবাহিত করে। সহজ করে বলতে গেলে, কোন বস্তু যদি গতি সম্পন্ন হয়ে মহাকাশ বা মহাশূণে বিচরণ করে তাহলে পৃথিবীর অন্যান্য স্থিতিশীল বস্তুর তুলনায় তাদের সময় ধীর গতিতে চলবে।
মনে করি, ইংকু-টিংকু দুই বন্ধু। আরো ধরে নেয়া যাক যে, আলোর গতি সম্পন্ন মহাকাশযান আবিষ্কার হয়েছে। ইংকু এবং টিংকু দুজনেরই বয়স ২০ বছর। ইংকু আলোর গতি সম্পন্ন একটি মহাকাশযানে করে মহাকাশ ভ্রমণে বের হলো এবং তার ঘড়ি বা ক্যালেন্ডারের হিসাব অনুযায়ী ৩ বছর ভ্রমণ করে ফিরে এলো। অর্থাৎ পৃথিবীতে পুনারায় ল্যান্ড করার সময় তার বয়স হচ্ছে ২০+৩=২৩ বছর। কিন্তু পৃথিবীতে সে এসে দেখলো যে, তার বন্ধুকে সে চিনতেই পারছে না। কারণ তার বন্ধু টিংকুর বয়স ৭০ বছর। এটার কারণ হচ্ছে, ইংকু গতিসম্পন্ন থাকার কারণে তার সময় স্লো মোশনে ছিল। অর্থাৎ আলোর গতির ৩ বছর=পৃথিবীর ৫০ বছর। এটাই হচ্ছে টাইম ডিলেশন।
এর মাধ্যমে বিজ্ঞানীরা লক্ষ বছর বেঁচে থাকার ইচ্ছা পোষণ করে। কিন্তু বিপত্তিটা অন্য জায়গায়। আইনস্টাইনের সূত্র অনুযায়ী আলোর গতিতে ছুটে চলা কোন ধরনের পদার্থ হওয়া সম্ভব নয়। কেননা, আলোর গতি পেতে হলে তাকে আলোর মত ভর শূন্য হতে হবে। অথচ ভর শূণ্য কোন কিছুতে কোন পদার্থ বহন হওয়া সম্ভব নয়। তাই বিজ্ঞানের আশা অনেকটাই নিরাশায় নিমজ্জিত। অর্থাৎ বিজ্ঞান এখানে আজও ব্যার্থ।
কিছুটা আশার আলো দেখিয়েছিল নিউট্রিনো কণা। যাকে বিজ্ঞান মহলে Ghost Particles বা ভূতুড়ে কণা হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়। ১৯৩১- বিজ্ঞানী উলফগ্যাং পাউলি সর্বপ্রথম নিউট্রিনো কণার অস্তিত্ব সম্পর্কে ধারণা করেন ও ভবিষ্যদ্বাণী করেন। ইলেকট্রনের ভর, শক্তি, ভরবেগ ইত্যাদির হিসাব মিলাতে গিয়ে তিনি এটি লক্ষ করেন।
এই নিউট্রিনো আলোর গতিতে চলে। আলো এবং নিউট্রিনোর মধ্যে অনেক অনেক পার্থক্য। একটা পার্থক্য হচ্ছে, আলো চলমান অবস্থায় যখন বাঁধাপ্রাপ্ত হয় অর্থাৎ কোন পদার্থ তার গতিকে রোধ করে তখন সে আর সামনে চলতে পারে না। পদার্থটি স্বচ্ছ হলে প্রতিফলিত হয়, নয়তো সেখানেই থেমে যায়। কিন্তু নিউট্রিনো কণার চলার সময় কোন কিছুর দ্বারা বাঁধাপ্রাপ্ত হলে সে তার মধ্য দিয়েই অনায়েসে চলে যায়। এমনকি প্রতিনিয়ত মহাজাগতিক নিউট্রিনো কণা আমাদের পৃথিবীকেও ভেদ করে চলে যায়। আমাদের মধ্যে দিয়েও প্রতিনিয়ত চলে যাচ্ছে কিন্তু আমরা বুঝতেও পারছি না। আর সবচেয়ে মজার ব্যাপার হচ্ছে এই নিউট্রিনোর ভর রয়েছে, আর আলোর কণার কোন ভর নেই।
এখানে আইনস্টাইনের একটা ব্যাপার ভুল প্রমাণ হলেও বিজ্ঞানীদের আশায় গুড়েবালি সেই আগের মতই। কেননা, এই নিউট্রিনো কণা দ্বারা কোন বাহন বানানো সম্ভব নয়। কারণ এটা কোন মৌলিক কণা নয়। এমনকি এই কণা এখনও ধরাছোয়ার বাইরে রয়েছে। তাকে ধরার জন্য কোন মেশিন বানালে সে সেই মেশিনের মধ্যে দিয়েও চলে যাবে অনবরত। এটার অন্যতম কারণ হচ্ছে, ১. নিউট্রিনো কণার কোন চার্জ নেই, যার জন্য কোন চৌম্বকীয় আকর্ষণ তাকে রোধ করতে পারে না। ২. এই কণা কোন কিছুর সাথে বিক্রিয়া করে না। যার জন্য এটা এখনও ধরাছোয়ার বাইরে। এছাড়াও আরো জটিল জটিল সমস্যার সম্মুখীন হয়েছে এটা নিয়ে গবেষণার সময়। হাজারো প্রশ্নের সমাধান এখনও বিজ্ঞানীদের হাতে নেই। একটার সমাধান হয় তো আরো ১০ টা প্রশ্ন সামনে চলে আসে। তাই এখন পর্যন্ত অর্থাৎ ৯০ বছরে এখনও এর কোন সঠিক সমাধানে বিজ্ঞান পৌছাতে পারেনি। আর এই কণার বহুমুখী আচরণ, যা বিজ্ঞানকে সর্বদাই বুড়ো আঙ্গুল দেখাচ্ছে, সকল বিজ্ঞানকে নাকানি চুাবানি দিয়ে বেড়াচ্ছে সব সময়। যার জন্যই তাকে ভূতুড়ে কণা হিসেবে আখ্যায়িত করা হচ্ছে। এখানেও বিজ্ঞান ব্যার্থ।
টাইম ডিলেশন করে পৃথিবীর লক্ষ বছর বেঁচে থাকার যে স্বপ্ন তা আজও স্বপ্নই রয়ে গেছে এবং আইনস্টাইনের তত্ত্ব অনুযায়ী তা কখনোই সম্ভব নয়।
টাইম ট্রাভেলিং
টাইম ট্রাভেলিং সম্পর্কে কথা বললেই আমার মত অনেকেই হাসাহাসি করেন। আমরা হাসাহাসি করলেও বিজ্ঞান মহলের অনেক বড় একটা অংশ আশাবদী যে টাইম ট্রালেলিং করা সম্ভব। কিভাবে সম্ভব? হ্যা সেখানেও রয়েছে গতির বিষয়টি।
২০১৫ সালে ফ্রান্সের একদল বিজ্ঞানী দাবী করেন যে, নিউট্রিনো কণার গতি আলোর চেয়েও বেশী। যা রীতিমত বিজ্ঞান মহলে হৈচৈ ফেলে দিয়েছিল। কিন্তু তা আবার পরে ভুল প্রমাণ হয় যে, নিউট্রিনো আলোর সমান গতিতেই চলে।
বিজ্ঞানের ধারণা আলোর গতিতে বা তার চেয়ে বেশী গতিতে চলতে পারলেই টাইম ট্রাভেলিং সম্ভব। আবার নিউট্রিনো কণা যেহেতু যেকোন বস্তুর মধ্য দিয়েই অনায়েসে চলে যেতে পারে, সেহেতু সহজেই কোন ধরনের বাধা ব্যাতীতই চলা সম্ভব। কিন্তু এখানেও সমস্যার সম্মুখীন।
১. নিউট্রিনো দিয়ে যান তৈরী করা সম্ভব নয়।
২. নিউট্রিনো এবং আলোর গতিতে কোন বাহন এখনও তৈরী হয়নি এবং আইনস্টাইনের মতে তা হবেও না।
৩. টাইম ট্রাভেলিং সম্ভব হলেও সেটা অতীতে যাওয়া সম্ভব নয় তবে ভবিষ্যতে যাওয়া সম্ভব।
উপরে ইংকু-টিংকুর উদাহরণ দিয়েছি। ইংকু পৃথিবীতে ফিরে এসে তার বন্ধু টিংকুকে ৭০ বছরের বৃদ্ধ হিসেবে পেল কিন্তু ইংকুর বয়স ২৩ বছর। সুতরাং এটাই হচ্ছে ইংকুর জন্য টাইম ট্রাভেলিং বা ইংকু ভবিষ্যতে চলে এসেছে। যেখানে তার বয়স ২৩ কিন্তু তার সমবয়সী বন্ধুর বয়স ৭০। এটাই ভবিষ্যতে যাওয়া। কিন্তু সে তার অতীতে আর ফিরে যেতে পারবে না।
অনেকে হলিউডের বিভিন্ন মুভি এবং সিরিয়াল দেখে টাইম ট্রাভেলিং সম্পর্কে জগাখিচুড়ী পাকিয়ে ফেলেছে। মূলত সেটা নিতান্তই অবাস্তব এবং অবান্তর। উপরের উদাহরণটাও এখনও অপরিক্ষীত, যা কেবল ধারণার মধ্যেই সীমাবদ্ধ। যদি কখনো নিউট্রিনো বা আলোর গতির বাহন আবিষ্কার করা সম্ভব হয়। তখনই কেবল এটা করা সম্ভব, তবে অতীতে যাওয়া কখনোই সম্ভব নয়।
তবে সর্বপরি কথা হচ্ছে, এখনও টাইম ট্রাভেলিং এ বিজ্ঞান আশার আলো দেখেনি। বিগত ১০০ বছরেও তারা এটার সমাধান করতে পারেনি। অদৌ কোনদিন পারবে কিনা সন্দেহ।
ব্লাকহোল
ব্লাকহোল কে গ্যালাক্সির সবচেয়ে আশ্চার্যজনক এবং রহস্যময় গহব্বর বললে ভুল হবে না। প্রতিদিন হাজার হাজার থিওরি এবং গবেষণাপত্র জমা হচ্ছে ব্লাকহোল নিয়ে। ব্লাকহোল নিয়ে বিজ্ঞানের ধারণা এখনও তেমন যথেষ্ট নেই বললেই চলে। যতটুকু রয়েছে তার অধিকাংশই ধারনা করা।
ব্লাকহোল এর বাংলা অর্থ হচ্ছে কৃষ্ণ গহব্বর। ছোট পরিসরে যদি ব্লাকহোল কি এটা সম্বন্ধে ধারণা দিতে হয় তাহলে ছোট্ট একটা উদাহরণ দেয়া যাক।
বড় বাধ, নালা, খাল বা রাস্তার মধ্য দিয়ে পানি একপাশ থেকে আরেক পাশে প্রবাহিত করার জন্য বড় আকৃতির পাইপ বা নালা ব্যাবহার করা হয়। যখন একপাশে পানির পরিমাণ বেশী হয় তখন দেখবেন পাইপের যে পার্শ্বে পানি বেশী সে পার্শ্বে কুন্ডলী পাকিয়ে পানি প্রবেশ করছে এবং অপর পাশে বের হচ্ছে। আর এই কুন্ডলীর আশেপাশে যদি ভাসমান যত ময়লা বা পাতা বা ইত্যাদী কিছু থাকে তাহলে তা সেখানে গিয়ে ঘুরতে থাকে। আস্তে আস্তে কুন্ডলীর মধ্যে যেটা পড়ে যায় সেটা সেখান থেকে অন্য পাশে চলে যায়।
উদাহরণটা যদি ব্লাক হলের দিকে চিন্তা করি তাহলে ঠিক এমনি। কিন্তু এটা ধারনা। প্রতিটা গ্যালাক্সিতে একটি ব্লাকহোল থাকে। তাকে ঘিরেই লক্ষ লক্ষ সৌর জগত, নেবুলা, তারকাপুঞ্জ ইত্যাদী আবর্তন করে। আর ব্লাকহোলের মধ্যে যে গ্রহ বা নক্ষত্র পতিত হয় সেটা ধ্বংস হয়ে যায়। একারণে বিজ্ঞানীরা এমনটা ধারনা করেন যে, এটা একটা কুন্ডলীর মত। কিন্তু মূল রহস্য এখন অধরা। কেননা, এই গহব্বরটা এত কালো যে, এর মধ্যে আলোও রিফ্লেকশন হয় না। কোন আলো প্রবেশ করলেও আর ফিরে আসে না। আর এর আকর্ষণ শক্তি এত প্রখর যে, সূর্যের চেয়েও হাজার হাজার গুণ বড় বড় নক্ষত্র তার মধ্যে পতিত হয়ে ধ্বংস প্রাপ্ত হয় অথবা হারিয়ে যায়। যার কোন হদীস নেই। প্রতিনিয়তই এমন হাজারো গ্রহ ধ্বংস হচ্ছে বা হারিয়ে যাচ্ছে।
একারণেই বিজ্ঞান ধারনা করে যে, যদি এটা কুন্ডলীর মত হয় তাহলে হয়তো অন্য কোথাও বা অন্য কোন গ্যালাক্সির সাথে এর কানেকশন রয়েছে। অর্থাৎ অপর কোন গ্যালাক্সির কোন ব্লাকহোলের সাথে এর সংযোগ রয়েছে। আর এই সংযোগ স্থাপনকারী পথকে বলা হয় ওয়ার্মহোল। এর মধ্য দিয়ে সহজেই অন্য কোন গ্যালাক্সিতে যাওয়া যায়। এরসাথে আরেকটি ধারণা করে যে, এর মধ্য দিয়ে টাইম ট্রালেভিং করা সম্ভব।
কিন্তু সমস্যা অন্য যায়গায়। যদি বিজ্ঞানের এই ধারণা সঠিকও হয় তাহলেও কখনই মানুষ ব্লাকহোলে গিয়ে টাইম ট্রাভেল করতে পারবেনা। ১. ব্লাকহোলে কোন কিছু গিয়ে তা আর ফেরত আসেনা। ২. আসলেও সে তথ্য জানা নাই। ৩. ব্লাকহোল পর্যন্ত যাওয়ার জন্য কোন ধরনের মহাকাশ যান আবিষ্কার হয়নি। ৪. ব্লাকহোলে যাওয়ার জন্য মহাকাশ যান আবিষ্কার হলেও মানুষ কখনোই সেখানে যেতে পারবে না।
প্রথম ৩টি কারণ আমরা জানি কিন্তু ৪র্থ কারণটি নিয়ে অনেকেই প্রশ্ন করবেন যে, মহাকাশ যান আবিষ্কার হলেও কেন সেখানে যেতে পারবে না?
আমাদের এই জগতে এখন পর্যন্ত সর্বোচ্চ গতি হচ্ছে আলোর এবং নিউট্রিনো কণার। যা দিয়ে কোন যান বানানো সম্ভব নয় তা পূর্বে আলোচনা হয়েছে। আর যান হলেও সেই গতিতে ভর সম্পন্ন কোন কিছুর ভ্রমণ করা সম্ভব নয়। যেটা আইনস্টাইন ব্যাখ্যা করে গেছেন।
তারপরেও আমরা ধরে নিলাম যে, মহাকাশ যান আবিষ্কার হয়েছে এবং তাতে মানুষ ভ্রমণ করার উপযোগী। তাহলেও কোনদিনও আমাদের গ্যালাক্সি ব্লাকহোলে যাওয়া সম্ভব নয়। অন্য গ্যালাক্সিতে তো দূরে থাক। কেননা, আমাদের মিল্কিওয়ে গ্যালাক্সির ব্যাস হচ্ছে ১ লক্ষ আলোক বর্ষ। !!! জ্বি ভুল শোনেননি। ১ লক্ষ আলোক বর্ষ। অর্থাৎ আলো ১ লক্ষ বছরে যে পরিমাণ দুরত্ব অতিক্রম করে, তার সমান।
অথচ আমাদের মানুষের হায়াত দুনিয়ার ৫০ থেকে সর্বোচ্চ ১৮০ বছর বা নবীদের হায়াতের হিসাব করলে ১ হাজার বছর। যদি ধরেও নেই যে, আমরা আমাদের গ্যালাক্সির মাঝামাঝি রয়েছি তাহলেও কমপক্ষে ২৫ হাজার আলোক বর্ষ লাগবে। যেটা কোন মানুষের পক্ষে কোনদিনও সম্ভব নয়।
যেখানে নিজের গ্যালাক্সি পার হতে বা তার কেন্দ্রে যেতেই যদি এত সমসয় লাগে, তাহলে অন্য গ্যালাক্সিতে যাওয়ার কথাতো কল্পনাকেও হার মানাবে। আর ব্লাকহোলের আকর্ষণ ভেদ করা কোন গ্রহের পক্ষেই সম্ভব হয় না। সেখানে মহাকাশ যানের পক্ষে কোনদিনও সম্ভব হবে না।
আর বিজ্ঞানের তথ্য অনুযায়ী আমাদের এই Universe বা বিশ্ব ব্রহ্মান্ডে ১০০ কোটিরও বেশী গ্যালাক্সি রয়েছে। আমাদের গ্যালাক্সির সবচেয়ে কাছের গ্যালাক্সির নাম এন্ড্রোমিডা গ্যালাক্সি। যেটা আমাদের গ্যালাক্সি চেয়েও ৪ গুন বড়। এখানেই শেষ নয়, এরকম কোটি কোটি Universe নিয়ে গঠিত হয়েছে একটি Multiverse। কোটি কোটি Multiverse নিয়ে গঠিত হয়েছে Super Multiverse যা আমাদের ধারণার অনেক অনেক বাহিরে। এবার শুধু ভাবুন।
সুতরাং মোট কথা বলতে গেলে এখানেও বিজ্ঞান অনেকটাই ব্যার্থ। অনেকেই বলতে পারেন তাহলে বিজ্ঞান কেন এটা নিয়ে পড়ে রয়েছে? আমি বলবো সেটা প্রথমেই বলেছি যে, এটা একটা লোভনীয় ব্যাপার। কিন্তু এটা অদৌ সম্ভব হবে কিনা, সেটা ভবিষ্যত ই বলে দিবে।
ইসলামের সার্থকতা
চলুন এবার তাহলে একটু আমাদের পবিত্র ধর্ম ইসলাম নিয়ে একটু আলোচনা করা যাক। প্রথমেই বলে রাখি পবিত্র কুরআন এমন একটা গ্রন্থ যার মধ্যে সংক্ষিপ্ত বাক্যে অনেক কিছু বলা হয়। আর এটা কোন বিজ্ঞান গ্রন্থ নয়। এটা ধর্ম গ্রন্থ, কিন্তু পবিত্র কুরআনে বিজ্ঞানের অনেক কিছুর সমাধান পাওয়া যায়, যা বিজ্ঞান স্বীকার করে নিয়েছে এবং কুরআনের কোন আয়াত আজও কেউ ভুল প্রমাণ করতে পারেনি। আর আমরা বিশ্বাস করি, এই মহাবিশ্ব যিনি সৃষ্টি করেছেন তার কাছেই রয়েছে সব কিছুর সঠিক সমাধান।
টাইম ডিলেশন এখনও বিজ্ঞান জগতে থিওরি হিসেবেই রয়েছে। উপরে টাইম ডিলেশনের যে ব্যাপারটা দেখানো হয়েছে, সেটা টাইম ডিলেশনের একটা ব্যাখ্যা। অর্থাৎ ৩ আলোক বর্ষ=পৃথিবীর ৫০ বছর। এবার দেখা যাক পবিত্র কুরআনে এই সম্পর্কে কিছু রয়েছে কিনা।
মহান আল্লাহ তায়ালা পবিত্র কুরআনের সূরা আল-মা’আরিজ এর ৪ নং আয়াতে বলেন:
ফেরেশতা এবং রূহ আল্লাহর দিকে আরোহণ করে এমন এক দিনে, যার পরিমান (তোমাদের হিসাব মতে) পঞ্চাশ হাজার বছর।
অর্থাৎ ফিরিশতারা মহান রবের দরবারে এমন একটি দিনে উপস্থিত হয় বা হবে যেদিনের এক দিন সমান দুনিয়ার ৫০ হাজার বছরের সমান। জ্বি। ঠিক শুনেছেন। যে থিওরি পুরো পৃথিবীর বিজ্ঞান কে পরিবর্তন করে দিয়েছে। সেই থিওরি কিন্তু ১৪০০ বছর পূর্বেই মহান আল্লাহ তায়ালা তার হাবীব সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর মাধ্যমে দিয়েছেন।
ফিরিশতারা নূরের বা আলোর তৈরী, তাদের জগৎও আলোর। সুতরাং বিজ্ঞানীদের টাইম ডিলেশনের সাথে পুরোপুরিই মিলে যাচ্ছে। টাইম ডিলেশনের আরো চমকপ্রদ কিছু নিয়ম রয়েছে। গতিশীল বস্তুর গতির আধিক্যতার কারণে অনেক ক্ষেত্রে সময়েরও পূর্বে কাজ হয়ে যায়। সহজভাবে বললে, মনে করুন একজন মানুষের চেয়ে মেশিন কাজ করার দিক দিয়ে বেশী গতিশীল। মানুষ যে কাজ ১০ ঘন্টায় করে মেশিন সেটা এক ঘন্টায় করে। অর্থাৎ গতিশীলতার কাছে কাজের সময় কমে যায়।
এমন যদি হয় একটি বস্তুর গতি এতটাই বেশী যে, দুনিয়ার মুহুর্ত যাওয়ার পূর্বেই সে বহু বছরের কাজ করে ফেলে। লক্ষ বছরের রাস্তা ঘুরে আসে। হ্যা ! বিজ্ঞানের পরিভাষায় এটাও অসম্ভব নয়। সম্ভব। কিন্তু এটা করতে হলে আলোর চেয়েও কোটি কোটি গুন বেশী গতিসম্পন্ন যানের প্রয়োজন, যেটা বিজ্ঞান মহলে কোনদিনও সম্ভব নয়।
কিন্তু এই কাজটিই করেছেন আমাদের প্রিয় রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম। তিনি সকল সৃষ্টি জগত ঘুরে এসেছেন মূহুর্তের মধ্যেই। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন যে, তিনি যাত্রা করার পূর্বে যেখানে অজু করেছেন, ফিরে েএসে দেখেন যে, সেখানের পানি এখনও গড়িয়ে পড়তেছে।
এর মানে হচ্ছে তার বাহনের গতি এতটাই বেশী যে, দুনিয়ার সময় এক মুহুর্ত পার হওয়ার পূর্বেই লক্ষ লক্ষ বছরের রাস্তা পারি দিয়ে এসেছে। তার বাহনে গতি কেমন ছিল? েএই সম্পর্কে বুখারী, মুসলিম, মুসনাদে আহমাদ সহ অসংখ্য কিতাবে এসেছে যে,
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন যে, আমার কাছে বোরাক আনা হল। এটি ছিল একটি সাদা লম্বা গাঁধার চেয়ে বড় এবং খচ্চর অপেক্ষা ছোট চতুষ্পদ জন্তু। এর পা আপন দৃষ্টিসীমায় পতিত হত।
অর্থাৎ বোরাকের গতি এতটাই বেশী ছিল যে, সে যেখানে তাকাত সেখানে চলে যেত। তার দৃষ্টি শক্তি কতটা প্রখর ছিল তা আল্লাহ তায়ালাই ভালো জানেন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম টাইম ডিলেশনের মাধ্যমে টাইম ট্রাভেল করে এসেছেন। তার বাহনের গতি এতটাই বেশী ছিল যা মুহুর্তেই সব কিছু করতে সক্ষম হয়েছে।
বোরাক অর্থ বিদ্যুৎ। যখন মানুষ বিদ্যুৎ এর সাথে পরিচিতই হয়নি তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বিদ্যুৎ তথা আলোর বাহনের থিওরি দিয়ে গেছেন। আজকের বিজ্ঞান আলোর বাহন অথবা নিউট্রিনোর বাহন বানানোর জন্য অবিরাম চেষ্টা চালাচ্ছে। অথচ সেটা ১৪০০ বছর পূর্বেই রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম প্রাকটিক্যালি ব্যাবহার করেছেন।
এখন একটু ভিন্ন আঙ্গিকের কথা বলি। আল্লাহ চাইলে কোন বাহনের দরকার হয় না। মানুষেরই এমন গতি ছিল যারা টাইম ট্রাভেল করতে সক্ষম ছিল।
“সুলায়মান আরো বললেন, হে আমার পরিষদবর্গ! তার (সাবার রানী, বিলকিস) আত্মসমর্পণ করে আমার নিকট চলে আসার পূর্বে তোমাদের মধ্যে কে তার সিংহাসন আমার নিকট নিয়ে আসবে? এক শক্তিশালী জ্বিন বলল, আপনি আপনার স্থান হতে উঠার পূর্বে আমি উক্ত সিংহাসন এনে দিব এবং এ ব্যাপারে আমি ক্ষমতাবান বিশ্বস্ত। কিতাবের জ্ঞান যার ছিল (আসিফ বিন বরখিয়া) সে বলল, আপনি চক্ষুর পলক ফেলার পূর্বেিই আমি তা এন দিব। হযরত সুলায়মান আ. যখন তা সম্মুখে রক্ষিত অবস্থায় দেখলেন, তখন বললেন, েএটা আমার প্রতিপালকের অনুগ্রহ, যদ্বারা তিনি আমাকে পরীক্ষা করতে পারেন আমি কৃতজ্ঞ না অকৃতজ্ঞ। (সূরা নামল, আয়াত: ৩৮,৩৯,৪০)”
হযরত সুলাইমান আ. এর দরবার থেকে সাবার রানীর দরবার ছিল ২৪০০ কি.মি.। যেতে আসতে মোট ৪৮০০ কি.মি.। একটা চোখের পলক ফেলতে সময় লাগে ০.০৭৮ সেকেন্ড। অর্থাৎ একজন মানুষ তিনি ০.০৭৮ সেকেন্ডে ৪৮০০ কি.মি. পথ পাড়ি দিয়ে সিংহাসন নিয়ে এসেছেন। তাহলে তিনি ১ সেকেন্ডে পাড়ি দিতে পারতেন ৬১৫৩৮ কি.মি.।
অথচ এই পর্যন্ত বিজ্ঞানের আবিষ্কৃত সর্বোচ্চ গতি সম্পন্ন মহাকাশ যানের গতি ১ সেকেন্ডে মাত্র ১৬০০ কি.মি.। পার্থক্যটা আমার করে দেয়া লাগবে না। যদি সাবা রাণীর সিংহাসন আরো দূরেও থাকতো তাহলেও সে চোখের পলকেই তা নিয়ে আসতে পারতো।
বিজ্ঞান যেখানে এখনও আশার আলো তেমন দেখতে পায়নি, সেখানে ইসলামের পাতায় পাতায় তার ভূড়ি ভুড়ি উদাহরণ বিদ্যমান। একারণেই মূলত অবিশ্বাসীরা বিশ্বাস করতে পারে না যে, এটা কিভাবে সম্ভব। আসলে যিনি টাইমেরও সৃষ্টি কর্তা তার কাছে সবই সম্ভব।
বিগত ২০০ বছর পূর্বে সর্ব প্রথম ব্লাক হোলের ধারনা পাওয়া যায়। ব্লাকহোলের ছবি তুলতে সক্ষম হয়েছে গত বছর। অর্থাৎ বিজ্ঞানের কাছে এত বছর পর্যন্ত এটা ছিল বিস্ময়ের নাম। কিন্তু এই ব্লাকহোল সম্পর্কে পবিত্র কুরআন ১৪০০ বছর পূর্বেই ধারণা দিয়েছে।
আল কুরআনের সুরা ওয়াকিআহ এর ৭৫-৭৬ নং আয়াতে আল্লাহ বলেন-
শপথ সে পতন স্থানের, যেখানে নক্ষত্রসমূহ ধ্বংসপ্রপ্ত হয়। যদি তোমরা জানিতে, উহা অবশ্যই এক মহা গুরুত্বপূর্ণ শপথ।
কিন্তু প্রচলিত অর্থে এর অনুবাদ (অথবা মর্ম অর্থ ধরে নেওয়া হয়েছে) করা হয়েছে- শপথ নক্ষত্রসমূহের অস্তগমন স্থানের। যদি তোমরা জানিতে, উহা অবশ্যই এক মহা গুরুত্বপূর্ণ শপথ।
এখানে অস্তগমন এর আরবি শব্দ হল মাওয়াকিয়ি। অর্থাr মাওয়াকিয়ি এর অর্থ অস্তাচল বা অস্ত যাওয়া বলে ধরে নেয়া হয়েছে। মাওয়াকিয়ি মূল শব্দ ওয়াকায়া, যার অর্থ হল- ধ্বংস হওয়া, ধ্বংসের টানে পতিত হওয়া, বিস্ফোরিত হওয়া ইত্যাদি। এটি একটি ক্রিয়াপদ, আর ক্রিয়াপদের পূর্বে যবরযুক্ত মিম সংযুক্ত হলে তা ক্রিয়াপদের স্থান বা কালকে প্রতিভাত করে। ওয়াকায়া অর্থ অস্তগমন, অস্তাচল বা অস্ত যাওয়া অভিধানের কোথাও নেই। তাহলে উক্ত আয়াতের সঠিক অর্থ হচ্ছে-
শপথ সে পতন স্থানের (ব্ল্যাক হোল), যেখানে নক্ষত্রসমূহ ধ্বংসপ্রপ্ত হয়। যদি তোমরা জানিতে, উহা অবশ্যই এক মহা গুরুত্বপূর্ণ শপথ।
কুরআনের কথার সাথে আধুনিক বিজ্ঞানের সকল থিওরি মিলে যায়। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এই লক্ষ লক্ষ ব্লাকহোলের আকর্ষণ ভেদ করে সহজেই টাইম ট্রাভেল করে এসেছেন। যেখানে বিজ্ঞানের মতে এত আকর্ষণ বলের ব্লাকহোল ভেদ করা অসম্ভব প্রায়।
সুতরাং পরিশেষে একটা কথাই বলতে চাই, বিজ্ঞান যেখানে তেমন কোন ধারনাই পায় না, সেখানে ইসলাম তার প্রাকটিক্যাল করেছেন, বিজ্ঞান যেখানে অনেকটাই ব্যার্থ ইসলামে সেটার ভুড়ি ভুড়ি প্রমাণ রয়েছে। সুতরাং আসুন অবিশ্বাসী না হয়ে মহান আল্লাহর প্রতি ঈমান আনি। মা’আস সালাম
