স্পন্সরড এলার্ম



বাতাস দিয়ে কি গাড়ি চালানো সম্ভব? ১০০ বছরেরও বেশি সময় ধরে এটা প্রকৌশলীদের কাছে বেশ বড় একটি প্রশ্ন। জ্বালানী তেলের অসুবিধা হচ্ছে এর মজুদ একসময় শেষ হয়ে যাবে। কিন্তু অন্যদিকে বাতাস অফুরন্ত, পরিচ্ছন্ন ও পৃথিবীর সব খানেই বিস্তৃত। তবে গাড়িতে ব্যবহারযোগ শক্তির যোগান দিতে গেলে এ বাতাসকে অবশ্যই প্রচণ্ড চাপ প্রয়োগ করে জ্বালানীতে রূপান্তরিত করতে হবে। এবার ফ্রান্সের গাড়ি নির্মাণকারী প্রতিষ্ঠান PSA Peugeot Citroën এর দুজন প্রকৌশলী এগিয়ে এসেছেন এ সমস্যার সমাধানে ও এতদিনের কল্পনাকে বাস্তবে রূপ দিতে। এতে তারা গ্যাসোলিন ও হাইড্রোলিক্স এক সাথে ব্যবহারের চেষ্টা করেছেন। বায়ুচালিত গাড়ির সম্ভাবনা যাচাইয়ে তারা ২০১০ সালে Hybrid Air Program চালু করেন। এর অধীনে তারা একটি সাবকম্প্যাক্ট গাড়ির ইঞ্জিনের সাথে বাণিজ্যিক বিমানের হাইড্রলিক সিস্টেমকে যুক্ত করেন। প্রকৌশলীদের একজন করিম মোকাদ্দেম বলেন,” আমরা এরকম একদল লোকের বিরোধিতার মুখে এ প্রকল্প চালিয়ে যাচ্ছি যারা মনে করেন যে আমরা সাফল্য লাভ করতে পারবো না”।
করিম ও তার সহকর্মী আন্দ্রেস ইয়ারসে তাদের নকশা করা নতুন বাহনের নাম দিয়েছেন The Hybrid Air powertrain। তারা হাই-প্রেসার একুমুলেটর চেম্বার বা প্রকোষ্ঠের ভেতর হাইড্রোলিক পাম্প ও পিস্টন ব্যবহার করে নাইট্রোজেন গ্যাসের উপর চাপ প্রয়োগ করেন। এক্সিলারেটরে চাপ প্রয়োগের ফলে এ গ্যাস হাইড্রলিক ফ্লুয়িড বা তরলে রূপান্তরিত হয়। যে পাইপ দিয়ে গ্যাস পরিবাহিত হয়, সেই একই পাইপে উলটো দিকে হাইড্রলিক ফ্লুইড প্রবাহিত হয়। পাম্পটি গাড়ির চাকাকে শক্তি সরবরাহ করতে মোটর হিসেবে কাজ করে। হাইড্রলিক ফ্লুইড দ্বিতীয় আরেকটি ট্যাঙ্কে গিয়ে জমা হয়।
স্বাভাবিক ড্রাইভিং এর সময় পুরো ব্যবস্থাটি গ্যাস ও বায়ু শক্তি ব্যবহার করে পরিচালিত হবে। আন্দ্রেস অনুমান করে বলেন যে, শহরাঞ্চলে এ গাড়িটি চালানোর ক্ষেত্রে যদি এর গতি হয় ঘণ্টায় ৪৩ কিলোমিটার, তবে গাড়িটি চালানোর মোট সময়ের ৬০-৮০ ভাগ চালানো যাবে বাতাসের শক্তি ব্যবহার করে। গ্যাসোলিন-ইলেক্ট্রিকসের সাথে তুলনা করলে The Hybrid Air powertrain অনেক হালকা ও সস্তা। এছাড়া এতে বেঢপ আকৃতির ব্যাটারিও ব্যবহার করার প্রয়োজন নেই। একটাই কাজ করতে হবে, বাতাস শেষ হয়ে গেলে আবার বাতাস সঞ্চালন করতে হবে।
করিম ও আন্দ্রেসের এ বায়ুচালিত গাড়ির পরীক্ষামূলক সংস্করণ বা প্রটোটাইপ এতোটাই সফল হয়েছে যে, PSA Peugeot Citroën এ গাড়ি বাণিজ্যিকভাবে উৎপাদনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। আশা করা হচ্ছে, ২০১৬ সাল নাগাদ ইউরোপসহ আন্তর্জাতিক বাজারে এ গাড়ির বিক্রি শুরু হবে।
(1595)