স্পন্সরড এলার্ম


কথা কম বলা, আহার কম করা, দৃষ্টিকে সংযত করা, অল্পতে সন্তুষ্টি প্রকাশ করার মত উত্তম চরিত্র সূফীদের জীবনীতে ভরপুর। তারা প্রয়োজনের বেশী কখনোই কথা বলতেন না। পবিত্র কুরআনে মহান আল্লাহ তায়ালা বলেন:
“আর মানুষের মধ্য থেকে কেউ কেউ না জেনে আল্লাহর পথ থেকে মানুষকে বিভ্রান্ত করার জন্য বেহুদা কথা খরিদ করে, আর তারা সেগুলোকে হাসিঠাট্টা হিসেবে গ্রহণ করে; তাদের জন্য রয়েছে লাঞ্ছনাকর শাস্তি।” (সূরা লুকমান : ৬)
রাসুল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘কোনো ব্যক্তির ইসলামের অন্যতম সৌন্দর্য হলো অর্থহীন কথা বা কাজ ত্যাগ করা।’ (সুনান তিরমীযী; হাদিস : ২৩১৮)
এছাড়া যে চুপ থাকে সে নাজাত পায় মর্মেও হাদীস রয়েছে। এগুলো ছাড়াও অসংখ্য হাদীস রয়েছে প্রয়োজনের অতিরিক্ত কথা বলা থেকে বিরত থাকার জন্য। আমাদের গ্রামে একটা প্রবাদ রয়েছে যে, “বোবার কোন শক্র নাই”
সূফীগণ খুবই কম আহার করতেন। আহার কম করার ব্যাপারেও পবিত্র হাদীস শরীফে অনেক নির্দেশনা রয়েছে।
হযরত আবূ হুরায়রা রদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেনঃ মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর পরিবার তাঁর ইনতিকাল পর্যন্ত একনাগাড়ে তিনদিন পরিতৃপ্তির সঙ্গে আহার করতে পাননি। [মুসলিম পর্ব ৫৩/হাঃ ২৯৭৬]
হযরত মিকদাম ইবন মাদিকারাব রদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, ‘আমি রাসুল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম কে বলতে শুনেছি, “পেটের চেয়ে মন্দ কোনো পাত্র মানুষ ভরাট করে না। পিঠের দাঁড়া সোজা রাখার মতো কয়েক লোকমা খাবারই আদম সন্তানের জন্য যথেষ্ট। আর বেশি খাবার ছাড়া যদি তা সম্ভব না হয়, তাহলে পেটের এক-তৃতীয়াংশ খাবারের জন্য, এক-তৃতীয়াংশ পানির জন্য আর বাকি তৃতীয়াংশ শ্বাস-প্রশ্বাসের জন্য রাখবে।’ (সুনান তিরমিজি; হাদিস : ২৩৮৩)
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর পবিত্র সুন্নাত সূফীগণ জীবিত রেখেছেন শতাব্দীর পর শতাব্দী। আর আমরাতো এগুলোর কোন তোয়াক্কাই করি না। অপর একটি হাদীসে রয়েছে যে, মু’মিন খায় এক পেট আর কাফির খায় সাত পেট।
সূফীগন সর্বদা তাদের দৃষ্টিকে নিম্নগামী রাখতেন। কোন সময় যদি নিজের অজান্তে এমন কোন কিছুর উপর দৃষ্টি পড়তো, যা তাকওয়ার খেলাফ এবং নফসকে গুনাহের দিকে ধাবিত করে। তখন তারা ইস্তেগফার পড়তে থাকতেন।
মহান আল্লাহ তায়ালা পবিত্র কুরআনে বলেন,
“তুমি মুমিন পুরুষদের বলে দাও, তারা যেন তাদের দৃষ্টিকে নত রাখে এবং তাদের লজ্জাস্থানের হেফাযত করে’ (সূরা নূর ২৪/৩০)
হযরত আবু হুরায়রা রদিয়াল্লাহু আনহু হ‘তে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, তিন শ্রেণীর চক্ষু জাহান্নাম দর্শন করবে না ১. যে চক্ষু আল্লাহর ভয়ে ক্রন্দন করে। ২. যে চক্ষু আল্লাহর রাস্তায় পাহারা দেয়। ৩. যে চক্ষু আল্লাহর হারামকৃত বস্তু হ’তে নিম্নগামী হয়’
(আল মু‘জামুল কাবীর হাদিস: ১০০৩, ২০৪১০, ২৬৬১৫)
দৃষ্টি নিম্নগামী করার ব্যাপারে অগনিত নির্দেশ রয়েছে। যা আমাদের সমাজে বর্তমানে খুব একটা চোখে না পড়লেও যারা সূফীজম চর্চার মাধ্যমে নিজের নফসকে দমন করতে চায়। তারা সর্বদা এগুলো মান্য করে।
সূফীরা সর্বদাই মহান আল্লাহ তায়ালা যেমন চান সেই সিদ্ধান্তেই সন্তুষ্টি থাকেন। অর্থাৎ তাক্বদীরের উপর পূর্ণ বিশ্বাস স্থাপন করেন। নিজের কোন ইচ্ছাকে তারা কখনোই গুরুত্ব দিতেন না। সর্বদাই মহান আল্লাহর কাছে সর্বাবস্থায় শুকরিয়া আদায় করতেন। তারা ভাবতেন যা হচ্ছে সবই তাদের জন্য কল্যানকর।
মহান আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘অতএব তোমরা আমাকে স্মরণ করো; আমিও তোমাদেরকে স্মরণ করব। তোমরা আমার প্রতি কৃতজ্ঞ হও, আর অকৃতজ্ঞ হয়ো না’ (সূরা আল-বাকারা : ১৫২)
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন “মুমিনের বিষয়াদি কত আশ্চর্যের! তার সবকিছুই কল্যাণকর। আর এটা তো কেবল মুমিনের ক্ষেত্রেই হতে পারে। সচ্ছলতায় সে শুকরিয়া আদায় করে, তখন তা তার জন্যে কল্যাণকর হয়। আর যদি তার ওপর কোনো বিপদ নেমে আসে তাহলে সে সবর করে, ফলে তাও তার জন্যে কল্যাণকর হয়ে যায়। (সহীহ মুসলিম, হাদীস ২৯৯৯)
এছাড়াও শুকরিয়া আদায়ের ব্যাপারে ব্যাপক দলীল এবং নির্দেশনা রয়েছে। কিন্তু আজকে আমাদের সমাজে শুকরিয়া নামক ইবাদত হারিয়ে গেছে বললেই চলে। যার পর্যাপ্ত সম্পদ রয়েছে, সে আরো বেশি বেশি সম্পদ আহরোণে ব্যাস্ত হচ্ছে, সামান্য বিপদ চলে আসলে মহান আল্লাহ তায়ালাকে দোষারোপ করে। অথচ বিপদ মানুষের জন্য পরীক্ষা স্বরূপ।
এই বিষয়গুলো সূফীরা অত্যন্ত কঠোরভাবে পালন করেন। কেননা, তারা তাদের নফস কে দমন করতে চাইতেন। পবিত্র কুরআনে ৩ ধরনের নফসের কথা রয়েছে। ১. নফসে আম্মারা ২. নফসে লাওয়্যামা ৩. নফসে মুত্বমা-ইন্না । সূফীরা তাদের নফসকে নফসে মুত্বমা-ইন্নার পর্যায়ে নিতে চাইতেন। কেননা, দুনিয়া ও হাশরে সফলকাম হওয়ার জন্য এই নফস অর্জিত হওয়া খুবই জরুরী। এই নফসধারীগণ বিনা হিসেবে জান্নাতে প্রবেশ করবে। আর বাকি নফসধারীগণ তাদের কৃতকর্মের আজাব ভোগ করার পরে জান্নাতে যাবে।
যার জন্য আত্মশুদ্ধির সর্বোচ্চ পর্যায় হচ্ছে এই নফস অর্জন করা। এটা করতে হলে নফস দমনের পদ্ধতিগুলো অনুসরণ করা জরুরী। নফসের প্রকারভেদের দলীল এবং কোন নফসের কি কাজ এবং কেন নফসে মুত্বমা-ইন্না সেরা । এগুলো নিয়ে পরের পর্ব গুলোতে বিস্তারিত ধারাবাহি আলোচনা হবে।
চলবে………….
সূফীদের হালচাল। পর্ব-০২ (1216)