স্পন্সরড এলার্ম


পরের হক্বের ব্যাপারে আমরা কজন-ই বা সতর্ক থাকি? প্রতিবেশীকে কষ্ট দেয়া থেকে কি আমরা বিরত থাকছি? প্রতিবেশী অসুস্থ হলে বা না খেয়ে থাকলে আমরা কতদিন-ই বা খোঁজ নিয়েছি? সুযোগ এলেও অসৎ কাজ থেকে আমরা কজন-ই বা বিরত থাকি? অথচ সূফীগণ সর্বদা পরের হক্বের ব্যাপারে সর্বদা সচেতন থাকতেন। পুরো দুনিয়া তাদের হাতে তুলে দিলেও তারা কখনো ইনসাফ থেকে, হক্ব থেকে বিচ্যুত হতেন না।
মহান আল্লাহ তায়ালা পবিত্র কুরআনে বলেন “তোমরা নিজেদের মধ্যে একে অন্যের অর্থ-সম্পদ অন্যায়ভাবে গ্রাস করো না এবং মানুষের ধন-সম্পদের কিয়দংশ জেনে-শুনে অন্যায়ভাবে গ্রাস করার উদ্দেশ্যে তা বিচারকের কাছে পেশ করো না। (সূরা আল-বাকারা, আয়াত-১৮৮)
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন “প্রকৃত মুসলিম সেই ব্যক্তি, যার জবান (কথা) ও হাত থেকে অন্য মুসলিম নিরাপদ থাকে। আর মুহাজির সেই ব্যক্তি, আল্লাহ যা নিষেধ করেছেন তা সে পরিত্যাগ করে। (সহীহ বুখারী- ৬৪৮৪)
আল্লাহ তায়ালা অন্যত্র বলেন, আর (তারাই প্রকৃত মুমিন) যারা আমানত ও প্রতিশ্রুতি রক্ষা করে (সূরা আল-মুমিনুন, আয়াত-৮)
পরের হক্ব রক্ষা করার ব্যাপারে বহু নির্দেশ রয়েছে পবিত্র কুরআন এবং হাদীসে। যা আমরা প্রায় ভুলেই গিয়েছি। এছাড়াও প্রতিবেশীকে কষ্ট দেয়া, তাদের হক্ব নষ্ট করার নামান্তর।
পবিত্র কুরআনে আল্লাহ তাআলা বলেন “তোমরা আল্লাহর ইবাদত করো। কোনো কিছুকে তার সঙ্গে শরিক কোরো না এবং পিতা-মাতা, আত্মীয়-স্বজন, এতিম, অভাবগ্রস্ত, নিকট-প্রতিবেশী, দূর-প্রতিবেশী, সঙ্গী-সাথী, মুসাফির ও তোমাদের দাস-দাসীর সঙ্গে ভালো ব্যবহার করো। নিশ্চয় আল্লাহ দাম্ভিক অহংকারীকে পছন্দ করেন না। (সুরা নিসা, আয়াত : ৩৬)
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন “যে ব্যক্তি আল্লাহ ও পরকালের প্রতি ঈমান রাখে, সে যেন তার প্রতিবেশীকে কষ্ট না দেয়। (সহীহ বুখারী, হাদিস নং- ৪৮৯০; সহীহ মুসলিম, হাদিস নং- ১৮৩)
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম অন্যত্র বলেছেন “আল্লাহর শপথ! সে মুমিন নয়; আল্লাহর শপথ! সে মুমিন নয়; আল্লাহর শপথ! সে মুমিন নয়; জিজ্ঞেস করা হল: হে আল্লাহর রাসূল! কে সেই ব্যক্তি? তিনি বললেন: যার অনিষ্ট থেকে তার প্রতিবেশী নিরাপদ নয়। (সহীহ বুখারী, হাদিস নং- ৫৬৭০)
এসব ব্যাপারগুলো আমরা ভুলে গেলেও শতাব্দীর পর শতাব্দী সূফীগণ এই ওয়াজিব আমলগুলো চালু রেখেছেন। তারা পরের হক্বের ব্যাপারে সতর্ক থাকতেন, প্রতিবেশিকে কষ্ট দিতেন না এবং তাদের অসুস্থতায় সেবা ও দুর্দিনে উত্তর খাবার সরবরাহ করেছেন। এই ধরনের নেক কাজ গুলোর উদাহরণ ভুড়ি ভুড়ি রয়েছে সূফীদের জীবনীতে।
হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, ঐ ব্যক্তি পূর্ণ মুমিন নয়, যে পেট পুরে খায় আর তার পাশেই তার প্রতিবেশী অভুক্ত থাকে’। (বায়হাকী শরীফ, মিশকাতুল মাসাবীহ, হা/৪৯৯১)
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন “হে আবূ যর! যখন তুমি তরকারি পাকাও, তখন তাতে একটু বেশি পানি দিয়ে ঝোল বাড়াও এবং তোমার প্রতিবেশিকে পৌঁছাও। (সহীহ মুসলিম, হাদিস নং- ৬৮৫৫)
আম্মাজান আয়েশা সিদ্দীকা রদিয়াল্লাহু ‘আনহা যখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামকে লক্ষ্য করে বললেন: আমার তো দুইজন প্রতিবেশী আছে, আমি তাদের কার কাছে উপঢৌকন পৌঁছাবো? তখন তিনি বললেন “উভয়ের মধ্যে যার ঘর তোমার বেশি কাছে হয়, তার কাছে পাঠাও। (সহীহ বুখারী, হাদিস নং- ২১৪০)
শুধুই কি প্রতিবেশীর হক্ব? সূফীগণ সকলের হক্বের ব্যাপারে সচেতন থাকতেন। বাবা-মায়ের হক্ব, স্ত্রীর হক্ব, ভাই-বোনের হক্ব, সন্তানের হক্ব, শ্মশুড়-শ্বাশুড়ীর হক্ব, ক্রেতার হক্ব, মুসাফিরের হক্ব, আত্নীয়তার হক্ব সহ ইত্যাদী সকল হক্বের ব্যাপারে তারা সর্বদাই কঠোর সতর্কতা অবলম্বন করতেন।
কেননা, এটাইতো সফলকাম হওয়ার উপায়। নফসে আম্মারাকে দমন করার অন্যতম হাতিয়ার। নফসকে দমন করে নফসে মুত্বমাইন্না অর্জন করতে পারলেই মহান আল্লাহ তায়ালার জান্নাতের সুসংবাদ অপেক্ষা করছে।
নফসের দুটি অর্থ অধিক গ্রহনযোগ্য। ১. প্রবৃত্তি ২. আত্মা।
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন اعلى عدوك نفسك التى بين جنبيك অর্থাৎ “তোমার সর্বাপেক্ষা বড় শত্রু তোমার দু’পার্শ্বে অবস্থিত তোমার প্রবৃত্তি।
নফসে আম্মারা শব্দের অর্থ হচ্ছে মন্দ কাজে অনুরক্ত আত্মা। যদি নফস আত্মিক প্রতিবাদ ত্যাগ করে কাম প্রবৃত্তির আদেশ অনুযায়ী চলে এবং শয়তানের অনুসরণ করে। তখন তাকে নফসে আম্মারা বলে।
মহান আল্লাহ তায়ালা পবিত্র কুরআনে বলেছেন:
ان النفس لامارة بالسوء অর্থাৎ “নিশ্চয়ই মানুষের মন মন্দকর্ম প্রবণ। (সূরা ইউসূফ:৫৩)
এক কথায় কু-প্রবৃত্তিই হচ্ছে নফসে আম্মারা। এই নফস কে সাহায্য করতে মানুষের মধ্যে আরো ১৭টি খারাপ শক্তি রয়েছে। যার মাধ্যমে মানুষ গুনাহের দিকে ধাবিত হয়।
১. পাঁচটি হচ্ছে বাহ্যিক অনুভূতি অর্থাৎ পঞ্চ ইন্দ্রিয় (চক্ষু, কর্ণ, নাসিকা, জিহ্বা, ত্বক) ২. পাঁচটি হচ্ছে গোপন অনুভূতি ৩. কামভাব এবং ক্রোধ বা রাগ (এগুলো বাহ্যিক) । এছাড়া লুকায়িত শক্তি রয়েছে ৭ টি ১. আকর্ষণকারী বা প্রলোভনকারী শক্তি ২. ক্রোধ ধারণকারী শক্তি ৩. অন্যায়ভাবে ক্ষমতা প্রয়োগকারী শক্তি ৪. প্রতিরোধকারী শক্তি বা চালিকা শক্তি ৫. হজম শক্তি (যে শক্তি খাদ্যকে শরীরের অংশে পরিণত করে ৬. প্রাণ শক্তি ৭ উৎপাদনকারী শক্তি
এই কুপ্রবৃত্তিকে দমন করতে সূফীরা সর্বদা চেষ্টা করতেন এবং এক সময় সফল হতেন। নফসে লাওয়্যামা এবং মুত্বমাইন্নার পরিচয়, কেনই নফসকে দমন করা জরুরী, নফসকে দমন করতে না পারলে কি কি ক্ষতি হয় ইত্যাদী বিষয়ে বিস্তরিত ধারাবাহিকভাবে পর্যায়ক্রমে আসবে ইনশা আল্লাহ।
সূফীদের হালচাল। পর্ব-০৩ (1095)