স্পন্সরড এলার্ম


নিজের স্ত্রীকে যখন ঘনিষ্ট বন্ধুর সাথে অথবা প্রতিবেশির সাথে পরিচয় করিয়ে দেন, সবচেয়ে ঘনিষ্ট বন্ধুর সাথে যখন লেনদেন করেন, ধনী ব্যক্তির সাথে যখন সফরে যান। তখনই তাদেরকে প্রকৃতভাবে চিনতে পারেন।
আপনার বন্ধু আপনার স্ত্রীর সাথে আপনার অগোচরে অবৈধ মেলামেশা শুরু করে আপনার সংসার ভেঙ্গে দেয়। যে বন্ধুকে সবচেয়ে বেশি আমলদার এবং সৎ মনে করতেন। সেই বন্ধুই আপনাকে বছরের পর বছর পাওনা টাকা নিয়ে ঘুরায়। যাকে আপনি ধনী ভেবে সফরে গিয়েছেন কিন্তু সফরে যাওয়ার পর দেখলেন যে, ধনী হলেও তার মত কৃপণ লোক দ্বিতীয় কেউ নেই।
এই ধরনের ঘটনা আমাদের সকলের সাথেই ঘটেছে। হরহামেশাই মানুষ এই ধরনের অভিজ্ঞতার স্বীকার হয়। আজকে আপনি এই ধরনের অভিজ্ঞতার স্বীকার অথচ কালকে আপনার দ্বারাই আরেকজন একই ঘটনার স্বীকার। সামাজিক এই অবক্ষয়ের একমাত্র কারণ হচ্ছে আমাদের নফস আমাদের কন্ট্রোলে নেই। সূফীজম চর্চা থেকে অনেক দূরে সরে গিয়েছি আমরা।
অথচ সূফীরা সর্বদা এই ব্যাপারগুলো কঠোর সতর্কতা অবলম্বন করেছেন। তাদের জীবনী এমন উত্তম চরিত্রের মাধ্যমে অলংকৃত হয়েছে।
আল্লাহ তায়ালা বলেন “আর তোমরা ব্যভিচারের কাছেও যেয়ো না। নিশ্চয় এটা অশ্লীল কাজ এবং মন্দ পথ। [সূরা বনী ইসরাঈলঃ৩২]
হযরত আব্দুল্লাহ ইবন মাসউদ রদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি একদা আরজ করলাম, হে আল্লাহর রাসুল! আল্লাহর কাছে সবচেয়ে বড় গুনাহ কী? তিনি প্রত্যুত্তরে বলেন, আল্লাহর সঙ্গে শিরক করা। অথচ তিনি প্রত্যেক প্রাণীর স্রষ্টা। আমি আবার প্রশ্ন করলাম, তারপর কী? তিনি বললেন, তোমার সন্তান তোমার সঙ্গে আহার করবে—এ আশঙ্কায় তাকে হত্যা করা। আমি আবার আরজ করলাম, তারপর কী? তিনি প্রত্যুত্তরে বলেন, তোমার প্রতিবেশীর স্ত্রীর সঙ্গে তোমার ব্যভিচার করা। (সহিহ বুখারি ও সহিহ মুসলিম)
সূফীগণ সর্বদা যেনা তো দূরে থাক, ঘর থেকে বাম পায়ের পরিবর্তে ডান পা দিয়ে বের হলেই আল্লাহর দরবারে তওবা এবং কাঁদতে কাঁদতে অস্থির হয়ে যেতেন। আমাদের মাঝে সেই চরিত্র কোথায়? কেন হারিয়ে গেল? একটাই উত্তর, সূফীজম চর্চা নেই আমাদের মাঝে। চর্চা করানোর মতো সেই ধরনের শায়েখও নেই।
পরের হক্বের মধ্যে অন্যতম হচ্ছে লেনদেন ঠিক করা। পাওয়ানাদারকে সঠিক সময়ে পাওনা বুঝিয়ে দেয়া।
রাসুলুলাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, ‘একমাত্র ঋণ ছাড়া শহীদের সমস্ত পাপ ক্ষমা করে দেয়া হয়।’ (সহীহ মুসলিম)
হযরত আব্দুলাহ ইবনে মাসউদ রদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, যদি কোন ব্যক্তির মধ্যে গড়িমসি (দেবো-দিচ্ছি) করার অভ্যাস থাকে তবে সে দুষ্টু লোক। আর গড়িমসি করা এক প্রকারের জুলুম। (মুসান্নাফে ইবনু আবি শায়বা)
রাসুলুলাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, ‘যে ব্যক্তি নিজের উপর একটি দিনার অথবা একটি দিরহাম ঋণ রেখে মৃত্যুবরণ করলো তা তার পূণ্য থেকে পরিশোধ করা হবে। কেননা সেখানে কোনো দিনারও নেই দিরহামও নেই।’ (সুনান ইবনে মাজাহ)
কৃপণতা কখনো সূফীদেরকে স্পর্শও করতে পারেনি। কেননা, নফসে আম্মারার অন্যতম চাহিদা হচ্ছে কৃপণতা করা। দান সদকা না করা, বন্ধুর জন্য, মেহমানের জন্য, মুসাফিরের জন্য, পরিবারের জন্য, সন্তানের জন্য খরচ না করা।
মহান আল্লাহ তায়ালা পবিত্র কুরআনে বলেন “ তুমি একেবারে ব্যয়-কুণ্ঠ হয়ো না এবং একেবারে মুক্ত হস্তও হয়ো না। তাহলে তুমি তিরস্কৃত, নিঃস্ব হয়ে বসে থাকবে।’ (সূরা আল-ইসরা, ১৭ : ২৯)
আল্লাহ তায়ালা অন্যত্র বলেছেন, ‘যারা নিজেরাও কার্পণ্য করে এবং অন্যদেরকেও কৃপণতা শিক্ষা দেয় আর গোপন করে সেসব বিষয় যা আল্লাহ তা’আলা তাদের দান করেছেন স্বীয় অনুগ্রহে বস্তুত কাফেরদের জন্য তৈরি করে রেখেছি অপমানজনক আজাব।’ (সূরা আন-নিসা: ৩৭; আরো দেখুন : সূরা আল-হাদিদ : ২৪)
রাসুলুলাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘কৃপণ ব্যক্তি কখনো জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবে না।’ (মুসনাদু আহমাদ, হাদিস-১৯১)
ঋণ পরিশোধ না করা, সময়মত পাওনা পরিশোধ না করা, প্রতিবেশির স্ত্রী বা বন্ধুর স্ত্রীর প্রতি কুনজর দেয়া নফসে আম্মারা অন্যতম চাহিদা। পূর্বের অধ্যায়ে উল্লেখিত কু-রিপু এবং এইগুলো থেকে যদি কোন মানুষ বেঁচে থাকতে না পারে, তাহলে তার বরযখি হায়াত শান্তিময় হবে না এটা নিশ্চিত। খেয়াল করলে দেখবেন যাদেরকে খুব ভাল এবং আমলদার মনে করতেন, তারাই এমন কাজে অনেক সময় জড়িত হয়ে যায়। কেন? একবারও কি ভেবে দেখেছেন?
নফসে আম্মারাকে নিয়ন্ত্রন ব্যাতীত সমাজ থেকে এসব কাজ দূর করা কখনোই সম্ভব নয়। নফস কে নিয়ন্ত্রন করার কাজ হচ্ছে সবচেয়ে বড় জিহাদ। হাদীসে এসেছে:
ফাযালা ইবনু উবায়দ রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত যে, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে আমি বলতে শুনেছি যে, প্রকৃত মুজাহিদ হলো সেই, যে স্বীয় নফসের বিরুদ্ধে জিহাদ করে (সুনান তিরমীযী: ১৬২৭। হদীসের মান সহীহ)
وأفضل الجهاد من جاهد نفسه فى ذات الله عز وجل
“সর্বত্তোম জিহাদ হলো আল্লাহর বিধানের ব্যাপারে নফসের সাথে জিহাদ করা।” (জামউল জাওয়ামি, কানযুল উম্মাল)
এছাড়াও একটি দূর্বল বর্ণনা রয়েছে যে, হযরত জাবির রদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, একদা আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যুদ্ধ থেকে ফিরলেন এবং সাহাবীদেরকে বললেন যে, তোমরা উত্তম স্থানে প্রবেশ করলে। আর তোমরা ছোট জিহাদ থেকে বড় জিহাদে প্রবেশ করলে। (অর্থাৎ তরবারির জিহাদ শেষ কিন্তু নফসের জিহাদ চলমান)। (ইমাম বায়হাক্বী: যুহুদুল কাবীর:৩৭৩। এগুলো ছাড়াও আমি প্রায় ২২ কিতাবের মধ্যে এই হাদীসটির উল্লেখ পেয়েছি। হাদীস দূর্বল হলেও গ্রহনযোগ্যতা ব্যাপক।)
আর এখানেই সূচনা সূফীজমের। শয়তান মহান আল্লাহ তায়ালার নিকট চ্যালেঞ্জ করেছে যে, সকল আদম সন্তানকে জাহান্নামে পাঠিয়ে দিবে। সেই শয়তানের সাথে জিহাদ করা। শয়তানি নফস হচ্ছে নফসে আম্মারা। কেউ যদি শয়তানের সাথে জিহাদ করে হেরে যায়, তাহলে তার জন্য জাহান্নাম অবধারিত। এখানেই সূফীজম।
শয়তান কিভাবে ধোঁকা দেয়, কেনই বা নফসের সাধনা করতে হবে, নফস দমনের সাধনা করার শরয়ী হুকুম কি? ইত্যাদী বিষয়ে বিস্তরিত ধারাবাহিকভাবে আসবে।
চলবে…………….
সূফীদের হালচাল। পর্ব-০৪ (1212)