স্পন্সরড এলার্ম


সূফীরা নিজের জীবনের চেয়েও রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কে বেশি ভালবাসতেন। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর ব্যাপারে সর্বাধিক আদব রক্ষা করা। বিশেষ করে তার কোন সিফাত, আখলাখ মুবারক অথবা তার শানে কোন ধরনের কথা বা মন্তব্য করার ক্ষেত্রে সর্বাধিক সতর্কতা অবলম্বন করতেন। কেননা, তার শানের ব্যাপারে একটু এদিক সেদিক হয়ে গেলে ঈমান সাথে সাথে চালে যাবে।
আমাদের দেশে বহু আলেম + সাধারণ মানুষ রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর শানে কোন কিছু শুনলে যদি সেটা তাদের মতের সাথে না মিলে তাহলেই একটা কটু মন্তব্য করে বসে। অথচ সূফীগণ এমন ছিলেন না। তারা ভয় পেতেন যে, যদি এটার বিরোধীতা আমি করি এবং সেটা যদি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর মধ্যে সত্যিই থেকে থাকে। তাহলে হাশরের ময়দানে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর সামনে দাড়াবো কিভাবে? যদি বেয়াদবি হয়ে যায় এবং রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম রাগ করেন, তাহলে এই জীবনের মূল্য কী?
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কে দুনিয়ার যাবতীয় সকল বস্তু হতে বেশি ভালবাসা ঈমানের দাবী। কেউ যদি তা না পারে, তাহলে তার ঈমাণে ঘাটতি রয়েছে।
মহান আল্লাহ তায়ালা পবিত্র কুরআনে বলেছেন: তোমাদের কাছে যদি আল্লাহ ও তাঁর রাসুল এবং আল্লাহর পথে জিহাদ করার চেয়ে অধিক প্রিয় হয়ে ওঠে তোমাদের পিতা, তোমাদের সন্তান, ভাই, স্ত্রী, পরিবার-পরিজন, তোমাদের অর্জিত ধন-সম্পদ, তোমাদের ব্যবসা-বাণিজ্য, যার মন্দায় পড়ার আশঙ্কা করো এবং তোমাদের বাড়িঘর, যা তোমরা পছন্দ করো, তাহলে অপেক্ষা করো আল্লাহর নির্দেশ (যুদ্ধের আদেশ) আসা পর্যন্ত। আল্লাহ পাপাচারী সম্প্রদায়কে সঠিক পথের দিশা দেন না।’ (সুরা তাওবা, আয়াত : ২৪)
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, সেই সত্তার শপথ! যাঁর হাতে আমার প্রাণ, তোমাদের কেউ প্রকৃত মুমিন হতে পারবে না; যতক্ষণ না আমি তার নিজের জীবনের চেয়ে, তার বাবা-মা ও সন্তানাদির চেয়ে অধিক ভালোবাসার পাত্র হই।’ (সহীহ বুখারি : হাদীস নং: ১৩)
ঈমানদার হওয়ার জন্য মুখে কালিমা পড়ার পরে এক নাম্বার শর্ত হচ্ছে নবীজিকে ভালবাসা। এই ভালবাসাটা কিভাবে প্রকাশ পাবে?
মহান আল্লাহ তায়ালা পবিত্র কুরআনে বলেছেন: “[হে রাসূল আপনি বলুন,] যদি তোমরা আল্লাহকে ভালবাস, তাহলে আমাকে অনুসরণ কর, তবে আল্লাহ তোমাদেরকে ভালবাসবেন এবং তোমাদের গুনাহসমূহ ক্ষমা করে দিবেন। আর আল্লাহ হলেন ক্ষমাশীল দয়ালু। {সূরা আলে-ইমরান: ৩১}
অর্থাৎ রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কে অনুসরণ করতে হবে। কিন্তু মহব্বত ছাড়া অনুসরণ করা সম্ভব হয় না। মানুষ যাকে যত বেশি ভালবাসে, তাকে তত বেশি অনুসরণ করে। তাই অনুসরণ করার পূর্ব শর্ত হচ্ছে অন্তরে রাসূল প্রেম জাগানো ।
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর ব্যাপারে সর্বোচ্চ আদব রক্ষা করা হচ্ছে ভালবাসার অন্যতম নিদর্শন। কেউ কাউকে বেশি ভালবাসে এটা তখনই প্রমাণ হবে যখন সেই ব্যক্তি তার ভালবাসার প্রতি সর্বোচ্চ আদব, সম্মানবোধ, ইজ্জত বজায় রাখবে। কেননা, আদব রক্ষা না করলে নিশ্চিত পতন।
আল্লাহ তায়ালা হযরত আবু বক্বর ও ওমর রদিয়াল্লাহু আনহুম কে পবিত্র কুরআনে ধমক দিয়েছেন। শুধুমাত্র এই কারণে যে, তাদের কণ্ঠস্বর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর সামনে একটু উচ্চ হয়েছিল।
হে ঈমানদারগণ! নবীর সামনে তোমরা স্বীয় কণ্ঠস্বর উচু করো না এবং তার সামনে চেচামেচি করে কথা বলো না। যেমন তোমরা একে অপরের সাথে চেচামেচি করে কথা বল। যাতে তোমাদের অজান্তে তোমাদের আমল বরবাদ হয়ে না যায়। (সূরা হুজুরাত: ০২)
এই আয়াতের পরের আয়াতেই আল্লাহ তায়ালা বলেছেন যে, তারাই রাসূলের সামনে কণ্ঠ নিচু করে। যাদের অন্তরে রয়েছে আল্লাহ তায়ালার ভয়। তাদের জন্য রয়েছে মহা পুরষ্কার।
এই কারণেই সূফীগণ রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর ব্যাপারে অত্যন্ত সতর্ক থাকতেন। সর্বশ্রেষ্ঠ দুজন উম্মত সামান্য কারণে তাদের আমল বরবাদ হয়ে যাওয়ার ধমক খেয়েছেন। সেখানে আমি বা আপনি কে???
কার এত বড় সাহস যিনি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর শানের কথা শুনা মাত্রই কটু কথা বলে? নবীজির এটা নাই, ওটা নাই, এটা পারে না, ওটা পারে না, তিনি এটা জানেন না ইত্যাদী ইত্যাদী কথা বলার সাহস কে দিয়েছে আপনাকে? আপনি কি সত্যিই জানেন যে, নবীজি এটা জানতেন না, এটা পারতেন না, এটা তাকে আল্লাহ দেয় নাই ইত্যাদী ইত্যাদী????
সূফীগণ তাদের নফসকে দমন করার প্রক্রিয়ার মধ্যে শানে রেসালাতের ব্যাপারে সতর্ক থাকাকে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিয়েছেন। নফসে আম্মারার ধোঁকায় মুয়াল্লিমুল মালাইকা হয়েছে, নিকৃষ্ট শয়তান। সুতরাং এই নফসকে দমন করতে হলে, নিজের ঈমানকে ঠিক রাখতে হলে, নবীজির প্রতি অসীম ভালবাসা থাকতে হবে। যে ভালবাসা প্রকাশ পাবে তার অনুসরণ এবং তার ব্যাপারে সর্বোচ্চ আদব রক্ষা করার মাধ্যমে।
আর নফসকে দমন করা এবং শয়তানের ধোঁকা বেঁচে থাকার অন্যতম উপায় হচ্ছে ক্বলবের মাধ্যমে জিকির করা (মুখে জিকির নয়)।
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, প্রত্যেক জিনিস পরিষ্কার করার যন্ত্র আছে, আর ক্বলব সমূহ পরিষ্কার করার যন্ত্র হল আল্লাহ তায়ালার যিকির। (ইমাম বায়হাক্বী রহ. হাদীসটি উল্লেখ করেছেন তার সুনান গ্রন্থে এবং মিশকাতুল মাসাবীহ এর মধ্যে ১৯৯ পৃষ্ঠা)
গতপর্বে আমরা জেনেছি যে, ক্বলবের মধ্যে শয়তান হাঁটু গেড়ে বসে ওয়াসওয়াসা দান করে। সেই ধোঁকা বাচতে হলে ক্বলব কে পরিষ্কার করতে হবে। আর পরিষ্কার করার মাধ্যম হচ্ছে ক্বলবের মাধ্যমে জিকির করা।
আল্লাহ তায়ালা পবিত্র কুরআনে বলেন “যারা ঈমান আনয়ন করে এবং তাদের ক্বলব আল্লাহ তায়ালার যিকির দ্বারা শান্তি লাভ করে। জেনে রাখ! আল্লাহ তায়ালার যিকিরের দ্বারা ক্বলবের প্রশান্তি লাভ হয়। (সূরা রা’দ: ২৮)”
এই ক্বলবের জিকির অর্জন করার জন্যই সূফীরা সর্বদা চেষ্টা করতো। কেননা, হাদীসের আমল আমরা সবাই করি। তারপরে আমরা পরিবর্তন হতে পারি না। কেননা, নফস সর্বদা একটিভ থাকে আমাদের মধ্যে। কিন্তু ক্বলবি জিকিরের মাধ্যকে নফস আস্তে আস্তে ডিএকটিভ হয়ে যায় এবং একজন মু’মিন নফসে মুত্বমাইন্না অর্জন করে।
ক্বলবের জিকির কিভাবে অর্জিত হয়? পদ্ধতি কি? ইত্যাদী বিষয়ে বিস্তারিত ধারাবাহিকভাবে আলোচনা হবে।
চলবে…
সূফীদের হালচাল। পর্ব-০৬ (1301)